সময় কাটে না! অবসরে কী করবেন?
সময় কাটে না! কী করবেন?
অনেকে বলছেন সময় কাটছেনা ঘরে বসে বসে। আমার হয়েছে উল্টো।
প্রতিটি দিন পার হয়, সারাদিন অনেক কিছু করার পরে রাত ১ টায় ঘুমাতে যাই অনেক কিছু করার তৃপ্তি নিয়ে । আবার কিছুটা অতৃপ্তি নিয়েও ঘুমাই। আহারে ওটা একটু বাকি থাকলো, এটা আরেকটু করা যেতো সময় পেলে ইত্যাদি।
তাহলে আমি কী করি? যা ভালো লাগে তাই করি।
১. বরাবরের মতো বই পড়ি। নানান ঘরাণার বই। একাডেমিক, ননএকাডেমিক, অফিসিয়াল আইনকানুন, আনঅফিসিয়াল ফিকশন ননফিকশন………কী নয়?
২. মাঝে মাঝে মুভি দেখি।
৩. লেখালেখি করি।
৪. গবেষণা বা জার্নাল আর্টিক্যালে প্রস্তুতে সময় দিই।
৫. বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে কোর্স করি নতুন কিছু শিখি।
৬.আত্মীয়-স্বজন, সমাজ ও দেশ নিয়ে ভাবি ও কিছু সময় দিই যোগাযোগে ও কিছু দাতব্য কাজে
৭. ইমেইল, লিংকডইন, ফেসবুকসহ নানান নেটওয়াকেও সময় যায়।
৮. নতুন কিছু প্রজেক্ট বা কাজের পরিকল্পনা করি, পারমুটেশন কম্বিনেশন করি, হিসাব মিলাই।
৯. মাঝে মাঝে বসে বসে ঝিমাই! কিছুই করিনা। কিছুই না করাও বড় কিছু করা! মাথাকে হজমের সময় দিই। সারাদিন এত ইনপুট নিই যে এগুলো জাবর কেটে থরে থরে সাজাতে হয়। তাই ঝিমানো জরুরি। ঝিমানোর মাঝেই ইউরেকা গুলো এসে হাজির হয়!
পাশাপাশি বাচ্চাদের হালকা একটু পড়াই, ফ্যামিলি টাইম হিসেবে কিছু সময যায়।
মোদ্দাকথা প্রতিদিন সকালে ঠিক করি আজ কী কী করবো। এবং এসব করতে করতে কখন রাত ১ টা বেজে যায় টেরই পাইনা।
আপনাদের যাদের সময় কাটেনা তারা এরকম ঘুম থেকে উঠে সকালেই অনেকগুলো কাজ ঠিক করে নিন যা আজকের দিনের মধ্যে শেষ করবেন। তারপর শুরু করুন। পছন্দের বিষয় যেমন ইনডোর গেম, ইয়োগা, ব্যায়াম, বই পড়া, লেখা, মুভি দেখা, অনলাইনে জব করা, প্রার্থনা করা, ফোনে ফোনে আড্ডা দেওয়া, জুম বা মেসেঞ্জারে মিটিং বা আড্ডা দেওয়া, ঝগড়া করা, নতুন কিছু শেখা, সাজগোজ করা, ফ্যাশন করা, ব্যবসা করা,.. নতুন কিছু শুরু করা…………….রান্না করা, নতুন কোনো রেসিপি ট্রাই,…হোম ডেকোরেশন কী নয়। এমনকি ফেসবুক পড়লেও ফেসবুকের নিউজফিড এমন করে সাজিয়ে নিন, যেন হাবিজাবি না আসে। ভালো কিছু আসে।
এরকম সাপ্তাহিক বা মাসিক প্ল্যানও করতে পারেন। যেসব কাজ দীর্ঘদিন ফেলে রেখেছেনে সেগুলো এখন শেষ করতে পারেন। যেসব কাজ লম্বা সময়ের অভাবে করতে পারেননা সেসব কাজ করে নিতে পারেন।
(খাওয়া-দাওয়া, বাজারসদাই, গোসল বাথরুম, এগুলো তো থাকবেই, এগুলো সবাই করে, সেগুলোর বাইরে কী কী করলেন সেটা ঠিক করুন)
ঘন্টার পর ঘন্টা ১টার পর ১টা কাজ ফিক্সড করে রাখুন। দেখবেন, ভাললাগেনা বলার বা ভাবার সময় পাবেননা।
ব্যস্তু থাকুন, সুষম খাবার খান, ভালো থাকুন।
………………..
মাসের যা ইনকাম তা দিয়ে মুদি মাল কিনেন, বাচ্চাদের এটা সেটা কিনেন, আত্মীয় পরিজন ও সামাজিক কাজে ব্যয় করেন, বাড়ি কিনেন বা বাসা ভাড়া দেন। কত কিছুই করেন।
মাসে যা পান তার কত পারসেন্ট দিয়ে বই কিনেন?
আমার মতে কমপক্ষে ১% খরচ করা উচিত বই কেনার পেছনে।
তথা আপনার যদি মাসে আয় হয় দশ হাজার টাকা, ১২০০ টাকার বই কেনা উচিত বছরে।
যদি মাসে আয় হয় বিশ হাজার টাকা, ২৪০০ টাকার বই কেনা উচিত বছরে।
যদি মাসে আয় হয় ৫০ হাজার টাকা, ছয় হাজার টাকার বই কেনা উচিত বছরে।
যদি মাসে আয় হয় লাখ টাকা,বারো হাজার বই কেনা উচিত বছরে।
যদি মাসে আয় হয় ২ লাখ টাকা, ২৪ হাজার টাকার বই কেনা উচিত বছরে।
এভাবেই কেনা উচিত। যত আয় বেশি বই কেনায় তত খরচ বেশি করা উচিত। কমপক্ষে ১%, বেশি হলে আরো ভালো।
এবং সংসার অফিস ব্যবসার হাজার কাজের ফাঁকে পড়া উচিত। যে পড়বেনা তার বই কেনা দিয়ে আর কাজ নেই।
মনে রাখবেন টাকা আয় করতে পারে সবাই এমনকি মজুর বা ফকিরেও, কিন্তু ব্যয় করতে পারেনা অনেকেই। কোথায় ব্যয় করতে হবে এটা আমাদের অনেকেই জানিনা।
কাজ করতে পারে সবাই, কী কাজে সময় ব্যয় করা উচিত তা আমাদের অনেকেই জানিনা। বই পড়ায়, বোঝায়, চিন্তায় সময় ব্যয় করুন। আত্মাকে সমৃদ্ধ করুন।
বই কিনুন, বই পড়ুন, জীবন সহজ পথে সুন্দর রাখুন ও মনকে প্রফুল্ল রাখুন।
০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০। কক্সবাজার।
……………………….
-ড. সফিকুল ইসলাম।
(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )