স্কুল ছাত্রকে পার্ক থেকে ধরে আনা উচিত কি?
স্কুল কলেজ পালিয়ে বাবা মাকে না বলে দিনের পর দিন পার্কে-মার্কেটে ঘুরে বেড়ায় বলে ঝালকাঠির ডিসি ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ নিয়ে কতিপয় বাচ্চাদের স্বাধীনতার ধোঁয়া তুলে নিয়ে ফেসবুক গরম করছেন। এটা জেলা প্রশাসক করতে পারেন কিনা। তাঁদের জন্য আমার জবাব।
……………………………………………….
১. বাচ্চাদের স্বাধীনতা জরুরি না। বাচ্চারা বাচ্চাই। তাঁরা অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণে থাকবেন। স্কুল পালিয়ে রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায়না।
২. আমার চাকুরিকালে এমন অনেকবার হয়েছে যে বাচ্চারা দিনের পর দিন স্কুল/কলেজের নাম করে বের হয় আর স্কুল কলেজে যায়না। ফলে অভিভাবকরা সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছে। অভিভাবকদের ইচ্ছা ও নালিশের প্রেক্ষিতেই প্রশাসন সহায়তা দিয়েছে।
৩. এটা স্কুলেরই কাজ। বাচ্চাদেরকে স্কুল টাইমে স্কুলে রাখা। শিক্ষক/ম্যানেজিং কমিটির কাজ। এ কাজ ডিসি করেননা। কিন্তু যখন যাদের কাজ তারা দায়িত্ব পালন করেননা বা করলেও ব্যত্যয় হয়, তখন সুপারভিশনের অংশ হিসেবে জেলার সমন্বয়ক ভূমিকা রাখতে পারেন। এটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
৪. সাধারণত এসব কাজ স্কুলের মাধ্যমেই করানো হয়। শুধু এ কাজের উদ্দেশ্যে ডিসি বের হননি; অন্য কাজের জন্য বের হয়ে পথে তা দেখতে পেয়েছেন বা অফিসে বসে কারো মাধ্যমে খবর পেয়েছেন। শুধু ফোন করে অফিসার পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন। বাচ্চাদের উপদেশ দিয়েছেন ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা সংক্রান্ত অফিসার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
৫. বাচ্চাদের কাছে ডিসির পাওয়ার দেখানোর কিছু নেই। সন্তানতুল্য বাচ্চাদের ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ভূমিকা রাখছে।
৬. সচেতন নাগরিক হিসেবে সন্তানের পিতা হিসেবে কমেন্ট করছি। জাপানের দুবছর আর অস্ট্রেলিয়ার দুবছরের দেখা অভিজ্ঞতা থেকেও কমেন্ট করছি। বাচ্চার মন চাইলো আর স্কুল পালিয়ে পার্কে চলে গেলো, এটা মেনে নেওয়ার বিষয় নয়। ওখানে এরকম ঘটলে স্কুল ক্লাশ-অধ্যক্ষর কক্ষ-অভিভাবকের বাসা এবং থানা খবর হয়ে যায়।
৭. কেউ যদি চায় যে তার বাচ্চারা স্কুল থেকে পালালেও সমস্যা নেই, সেটা ভিন্ন কথা। যেসব বাচ্চাদের বলা হয়েছে তাঁদের বাবা-মা চাননা যে তাঁদের অনুমতি ছাড়া বাচ্চারা স্কুল পালাক।
৮. বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। হতে পারে ধরণ ও পদ্ধতি নিয়েও। কিন্তু কেউ যখন বিষয়ের বাইরে গিয়ে ব্যক্তিকে বা পদকে (রাজা, বেকুব, জেলার মাথা বলে) গালি দেয়, টিজ করে তাতে বোঝা যায় যে বিষয়ের বিতর্কে তাঁদের আগ্রহ নেই। পদে প্রতি ঈর্ষা বা ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও উষ্মা প্রকাশ হয়ে পড়ে।
৯. স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, চলার স্বাধীনতা, শিক্ষার পরিবেশ ইত্যাকার বিষয়ে লেবু কপচানো বিদ্যা বা নির্যাসিত জ্ঞান আমাদেরও আছে। কিন্তু আমরা স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নেই। সব জায়গার জন্য এক প্রেস্ক্রিপশন দেইনা। ওটা বিশ্বব্যাংকের দালালদের কাজ।
যারা সুস্থ বিতর্ক বাদ দিয়ে গালাগালি করছেন তারা স্কুল পালিয়েই এসব শিখেছেন। তাই বিতর্কের ভাষা, যুক্তি ও ধারা এদের মাথায় নেই। আছে শুধু গালি আর উষ্মা।
-ড. সফিকুল ইসলাম।
(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )