গবেষণা নিয়ে চলমান বিতর্ক
গবেষণা নিয়ে চলমান বিতর্ক
……………
১। গবেষণা অনেক ধরণের হয়। ট্যাকনিক্যাল কঠিন কথায় না গিয়েও বলা যায় যে, কিছু গবেষণার বাজেট ও বিস্তৃতি অনেক বড় এমনকি দেশব্যাপী বা বিশ্বব্যাপী। আবার কিছু গবেষণা খুবই ছোট বিস্তৃতির। যেমন ব্যক্তি পর্যায়ের পিএইচডি বা পোস্ট ডকে বা ছোট প্রতিষ্ঠানের ছোট বাজেটের গবেষণা।
৩। গবেষণা করে একটি ফল পাওয়া গেলেই তা সর্বজনগ্রাহ্য হবে বা তাই একমাত্র সত্য তা বলা যায়না। গবেষণাটি অনেকগুলো লিমিটেশন বা অনুমিতির উপর ভিত্তি করে হয়। লিমিটেশন থাকে ডাটা কালেকশনে, মেথড অনুসরণে, সেম্পল সিলেকশনে, রিসার্চ গ্যাপ দাবি করায়, আরও অনেক কিছুতে।
৩। আর এ কারণেই ছোট পরিসরের কোন গবেষণার ফল হুট করে জাতীয় পত্রিকায় নজরকাড়া উত্তেজক হেডলাইন দিয়ে প্রকাশ করা সমীচীন নয়। গবেষণা ফল প্রকাশ করা যাবেনা বলছিনা। বলছি প্রকাশ করলেও তা যথাযথ গবেষণার ভাষা ব্যবহার করে সংক্ষেপে বিস্তারিত ফল ও লিমিটেশনসহ লেখা উচিত। কেন জেনারালাইজড করা যাবেনা তাও বিবেচনায় নিয়ে সেই খবরে বিস্তারিত থাকা উচিত। হেডলাইনও হতে হবে সেরকমই।
৪। কোন গবেষকের গবেষণার ফলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবেনা। কখনোই করা উচিত নয়। তার গবেষণা ফল সঠিক নাকি ভুল তা একমাত্র আরেকটি গবেষণার মাধ্যমেই তা প্রকাশ করা সম্ভব। এবং তাই সভ্য গবেষণা জগতের নিয়ম। যে ফল প্রকাশ হলো সে ফলাফলের পেছনে যে রিসার্চ তার সমস্যা কোথায় তা নিয়ে অন্য গবেষকরা প্রশ্ন তুলতে পারেন। প্রশ্ন তুলতে পারেন রিসার্চ মোটিভেশন, উদ্দেশ্য, রিসার্চ গ্যাপ, রিসার্চ মেথোডোলজি তথা ডাটা কালেকশন, সেম্পল কালেকশন, ভেলিডিটি, রিলাইয়েবিলিটি, ইথিক্যাল এপ্রুভাল ইত্যাকার সব বিষয়ে সকল লিমিটেশন দূর করা হয়েছে কিনা।
৫। যদি সব মানাও হয় তবুও এ গবেষণা ফল সারাদেশ বা সারাবিশ্বের জন্য প্রযোজ্য এমন জেনারালাইজ করা যাবেনা। কারণ সেম্পল সাইজ খুব ছোট। তার সাথে ল্যাবরেটরির কোয়ালিটি বা ব্যবহৃত ক্যামিকেল আসল না নকল সে প্রশ্ন থাকতে পারে। ল্যাব যদি ভালো না হয়, ব্যবহৃত ক্যামিকেল বা অন্যান্য এলিমেন্ট যদি মানসম্পন্ন না হয় তবে মেথডোলজি যত ভালোই হোক ভুল রিজাল্ট দিবে।
৬। আমি হার্ড সাইন্স /টেকনিক্যাল বিষয়ের গবেষণা জানিনা। সোশাল সাইন্সের গবেষণা যতটুকু জানি তাতে বলতে পারি যে আমি যদি একটি বিষয়ে ৩০ জনের ইনডেপথ ইন্টারভিউ নিয়ে কোয়ালিটেটিভ স্টাডি করি কিংবা ৩০০ জনের সার্ভে করে একটি কোয়ান্টেটিভ স্টাডি করি, কিংবা কোন বিষয়ের ১০ বছরের ডাটা নিয়ে স্টাডি করি এবং এ নিয়ে একটি গবেষণা ফল দাবি করি তা রিসার্চ এর নিয়মে সঠিক হলেও বাস্তবে তা সত্য নাও হতে পারে। আবার সত্য হতেও পারে। বাস্তবে সত্য না হলেও আমার রিসার্চ ভুল এ কথা কেউ বলতে পারবেনা। যেহেতু আমি রিসার্চের সকল নিয়ম মেনে রিসার্চ করেছি।
৭। তাই রিসার্চের সমালোচনা বা নাকচ একমাত্র রিসার্চ দিয়েই সম্ভব। গবেষণার ফল গবেষণা দিয়েই বাতিল করতে হবে। পত্র দিয়ে বা ফোন করে গবেষণার ফল বাতিল করা যায়না।
৮। গবেষণার ফলের খবর স্থানীয় পত্রিকার হলুদ সাংবাদিকের মতো ‘মহিলা নেত্রীর ঘরে উপজেলা চেয়ারম্যানের কী? কিংবা জাতীয় পত্রিকায় ‘বিরাট কোহলির দ্রুত আউট নিয়ে তার স্ত্রী চিন্তিত‘ টাইপ নিউজ এর মতো হেডলাইন ছাপালে জনমনে ভুল ধারণা পোঁছানোর সম্ভাবনা থাকে। (প্রথমটিতে মহিলা নেত্রী ও তার স্বামীর বিবাহ বার্ষিকীর নিমন্ত্রণে গিয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান, গোপন কিছু নয়; আর দ্বিতীয়টি কোহলির ক্রিকেটে আউটের কথা বলা হয়েছে, অন্য কোন কিছুর আউট নয়)
৮। একদিকে কোটি কোটি দুধের গ্রাহক অন্যদিকে দেশীয় শিল্প টিকে থাকার লড়াই ও বিদেশী দুধ কোম্পানী দেশে ঢুকার জন্য লর্ড ক্লাউভ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এরকম অবস্থার মাঝে পত্রিকার নিউজ গবেষণার ফল নিয়ে করতে হলে প্রতিটি শব্দ বুঝে শুনে ব্যবহার করা উচিত।
৯। যাই হোক, গবেষককে স্বাধীনভাবে গবেষণা করতে দিতে হবে। গবেষণায় ভুল থাকলে অন্য গবেষণা দিয়ে বাতিল করতে হবে। এমনিতেই দেশে শিক্ষক ও গবেষকরা গবেষণা না করায় দেশের সব ইউনিভার্সিটি ওয়ার্লড র্যাংকিং এ পিছিয়ে আছে। এখন নতুন করে আর কোন ভুল সিদ্ধান্ত না নিই। সবার জন্য সম্মানজনক, স্বস্তির, নিরাপদ গবেষণা ও পন্য উতপাদন চলমান রাখি।
১০। গবেষণা হোক প্রেরণা গবেষণা হোক শক্তি। মুখের বুলি আর বাহুর বল নিপাত যাক এই হোক উক্তি।
-ড. সফিকুল ইসলাম।
(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )