Detail

Home - ভ্রমণ কাহিনী - প্রবাসে বাঙালিদের পিকনিক ও দেশকে অনুভব!

প্রবাসে বাঙালিদের পিকনিক ও দেশকে অনুভব!

প্রশান্ত মহাসগারের তীরঘেষে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড প্রদেশের উত্তরপূর্বে একটি প্রাকৃতিক পর্যটন শহর অবস্থিত। নাম তার নোসা হেড।ক্যালন্দ্রা সম্প্রাদায়রা সেখানে বাস করতো। প্রথম সেটেলার হিসেবে ১৭৭০ সালে ক্যাপে্টইন কুক পা রেখে যাত্রা শুরু করেন। এরপর বিশ্বরাজনীতি বা অর্থনীতির কল্যাণ ও বাণিজ্যের খেলায় এ তীরও বাদ যায়নি। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের সৌন্দর্যের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে বিচ বা সমুদ্রসৈকত। প্রকৃতিই তার মূল সৌন্দর্য। পুরো অস্ট্রেলিয়া জুড়ে প্রায় ১০ হাজার ছোট বড় সমুদ্র সৈকত আছে। আমাদের পিকনিকের স্পট হিসেবে আমরা তাই সমুদ্র সৈকতকেই বেছে নিলাম আর খুঁজে খুঁজে বের করলাম খুব জনপ্রিয় আর বড় একটি বিচ, যার নাম নোসা হেড মেইন বিচ। ১৯৮০ সালের পর মূলত পর্যটন, সার্ফিং, ও হলিডে উদযাপনকে কেন্দ্র করে নোসা হেডের পুরো এলাকার তথা বিচ আর লেকের সমন্বয়ে রাস্তাঘাট ও অন্যান্য অবকাঠামোর দ্রুত উন্নতি হয়। নোসা হেড মেইন বিচ কোরাল সি সংলগ্ন কুইন্সল্যান্ডের নোসা হেডে অবস্থিত একটি বিচের নাম যা রাজধানী ব্রিসবেন থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে।

গত সপ্তাহের রবিবারে ওখানে ভ্রমণে গিয়েছিলাম আমরা গিফিথ ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এসোসিয়েশানের নেতৃত্বে পিএইচডি, মাস্টার্স, অনার্স এর ছাত্রছাত্রীরা ও অন্যন্য বাংলাদেশী কমিউনিটির সদস্যরা। নিজস্ব ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে আমরা ঠিক করলাম একটি বাস ভাড়া করে ঠিক বাংলাদেশে যেমন পিকনিক করতে যাই সেভাবেই যাব। প্রায় ৬০ জন পিকনিকের উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা হলাম। বাস আমাদেরকে নোসা হেড মেইন বিচের পাশে নামিয়ে দিল। বিচ থেকে একটু দূরে থামিয়েছে। যেখানে থামলে ট্রাফিক সমস্যা হবেনা, অন্য কারো বা পথচারির কারো সমস্যা হবে এমন স্থানে।

প্রথমেই আমরা সবাই গেলাম মেইন বিচ তথা সমূদ্রসৈকতে। হাজার হাজার পর্যটক সী বিচে সাঁতার কাটছে, সার্ফিং করছে, লাফালাফি করছে, বিভিন্ন খেলা খেলছে, সান বাথ নিচ্ছে কোন আওয়াজ নেই। মাছের বাজার টাইপ চিৎকার চেচামেচি নাই। স্বল্পবসনা নারী-পুরুষ যে যার মতো সমুদ্রস্নানে ব্যস্ত। কেউ কারো দিকে তাকানোর সময়ও নেই।তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আমাদের মতো ঝগড়াও নেই। পাশেই সুইমিং পুল। স্বচ্ছ পানিতে ছেলেপুলেসহ ফ্যামিলির সবাই সাঁতার কাটেছে। খুব মজার। কেউ কোথাও কাউকে বিরক্ত করছেনা। বা বিরক্ত হচ্ছেনা। পাশের ড্রেস চেঞ্জিং কক্ষে বা টয়লেটে হাজার লোক যাচ্ছে। টয়লেটে কোন অযাচিত ময়লা বা নোংরা পরিবেশ তৈরি করছেনা।কৃত্রিম ঝরণায় গোসলও খুব ফান! বাচ্চাদের জন্য  ছোট খাটো রাইড, বয়স্কদের জন্য শরীরচর্চার সরঞ্জাম। কী নেই? একটু দূরে দূরেই সমূদ্রে নামার জন্য সারিবদ্ধ সিড়ি। এবং গোসলের জন্য ঝরণাকল পয়েন্ট ও ড্রেস পরিবর্তনের জায়গা। না দেখলে বিশ্বাসই হয়না প্রকৃতির সাথে আধুনিক সরঞ্জামাদির কী সুন্দর সংযোগ ও সমন্বয়। মিলেমিশে একাকার। পর্যটকরা যত প্রয়োজন অনুভব করতে পারে সব আছে ওখানে। আমাদের ট্রলি ব্যাগ এক জায়গায় রেখে কত জায়গায় গেলাম। কোন চোর এসে সেটা নিয়ে যায়নি। আহা এমন যদি হতো!নিশ্চয়ই বিচের সব দেখে আমার কেবলি হলো প্রাকৃতিকভাবে আমাদের কক্সবাজার অনেক সুন্দর। এর ধারে কাছে অন্য বিচ আসবেনা। অন্তত আমার চোখে তাই মনে হয়েছে। তবে অন্যান্য সুবিধা, অবকাঠামো, মানুষের ব্যবহার, আচরণ, গতিবিধি, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিবেচনায় আমাদের যেতে হবে অনেক দূর। দরকার উন্নত অবকাঠামো এবং নাগরিকদের দায়িত্বশীল আচরণ ও রুচিশীল ব্যবহার।

এরপরেই আমরা সবাই মধ্যান্হভোজনে যোগদান করলাম। বাঙালিদের এ পিকনিকের পুরো রান্নাটি সম্পন্ন করেছেন বাঙালী কায়দায় বাঙালি রুচি ও স্বাধে আমাদের সকলের প্রিয় বাবুর্চি রাজু ভাই। বিদেশ বিভূঁইয়ে থাকি, তাই বাংলাদেশি খাবার আমরা ছাত্রছাত্রীরা যারা একা থাকি তারা খুব মিস করি। সুস্বাধূ খাবার খেয়ে বনভোজনের পূর্ণ স্বাধ পেলাম। সাধারণত এখানে সবাই নিজেরা নিজে রান্না করে খেতে হয়। কোথাও গেলেও রান্না করে নিয়ে যেতে হয়। যাকে বলে পটলাক লাঞ্চ। নিজের হাতের খাবার খেতে খেতে অনেকসময় আমরা হাঁপিয়ে উঠি। তাই পিকনিকের আনন্দের সাথে বাঙালি স্বাধের এ বনভোজন সত্যিই অতুলনীয়। খাবারের এ স্বাধ দেশ, মা  ও মাটিকে মনে করে দেয়।

ভোজনপর্ব শেষে খেলাধুলার আয়োজন ছিল সবচেয়ে মনকাঁড়া। ভাইদের, ভাবীদের, আপুদের ইভেন্টতো ছিলই, ছিল বাচ্চাদের জন্যও মনমাতানো আয়োজন। যদিও প্রবাসে এ খেলা তবুও সেখানে রাখা দেশীয় আমেজের সব দেশীয় খেলা। এসবের মধ্যেই আমরা বিদেশে বসে দেশের ক্রীড়াসংস্কৃতি উপভোগ করেছি। এবং বাচ্চাদের মধ্যেও তা সঞ্চারণের প্রচেষ্টা ছিল। ভাবী-আপাদের চোখ বাঁধা অবস্থায় দূর থেকে গিয়ে নায়িকা পূর্নিমার শাড়ীপরা ছবিটির কপালে সঠিক স্থানে টিপ পরানোর গেমটি ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও মজার। ক্রীড়ানুষ্ঠান ও লটারী চলাকালে স্বভাবসুলভভাবেই চলেছে ইয়ার্কি, ঠাট্রা, টিকা-টিপ্পনির নানা কথাবার্তার খেলা আর হাসি তামাশা। খেলাশেষে পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে সকল বিজয়ীর মাঝে।

সবশেষে আমরা গেলাম লেগোনা লুকআউট-এ যেখান থেকে পুরো নোসা হেড এলাকা দেখা যায়। সেখানে আয়োজন ছিল ঝাল-মুড়ি খাওয়ার। মুড়ি-কাঁচামরিচ-ধনেপাতা-পিঁয়াজ-সরিষার তৈল দিয়ে মাখিয়ে সবাই যখন খাচ্ছিল মনে হচ্ছিল অমৃত! পরে চা খাওয়া আর সূর্যাস্ত উপভোগ। একই সাথে আমরা একটি ছোট্র বিদায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিদায় দিলাম সদ্য পিএইচডি সম্পন্ন করা নাজমুল ইসলাম শিপলু ভাই এবং এহসান ভাইকে।

এভাবে একটা দিন আমরা ঠিক বাংলাদেশি আমেজে কাটিয়ে দিলাম। সন্ধ্যার সময় ড্রাইভার মাইক তার গাড়ি নিয়ে হাজির হওয়ায় যেন অনিচ্ছা স্বত্বেও নিজ ঠিকানার উদ্দেশে ফিরতি যাত্রা করলাম। এই দূর পরবাসে প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততা আর ক্লান্তির সীমানা পেরিয়ে একটি অন্যরকম দিন কাটানোর আনন্দে এই দিনটি আমাদের সকলের মনেই স্থান করে নেবে। হয়তো বা ভবিষ্যতে স্মৃতিচারণার এক উপলক্ষ হিসেবে রয়ে যাবে আমাদের হৃদয়ে। পিকনিকে অংশগ্রহণ করায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এসোসিয়েশানের সভাপতি সফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি রিপন কুমার মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ মারজিয়া বিলকিস।

2018

-ড. সফিকুল ইসলাম।

(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )

Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD
error: Content is protected !!

My Shopping Cart