Detail

Home - লাইফস্টাইল - সঙ্গীত-ভাবনা

সঙ্গীত-ভাবনা

জগতে এমন মানুষ কি পাওয়া যাবে যে সঙ্গীত পছন্দ করেনা? আমার মনে হয়না। শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতোই আমাদের ভিতরে সঙ্গীত নিয়েই আমরা জন্মগ্রহণ করি। রক্তপ্রবাহের মধ্যেই সঙ্গীত মিশে আছে আমাদের। খাদ্য ও পানীয়ের মতোই সঙ্গীতও প্রয়োজন আমাদের। ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক বাধানিষেধের কারণে হয়তো আমাদের কেউ কেউ কোন কোন সময় সকল গান অথবা কোন কোন গান থেকে বিরত থাকি। কিন্তু একটি ভালো গানের প্রাণ-জুড়ানো সুরে মনের অজান্তে অনিচ্ছাকৃতভাবে আমাদের হৃদয় আন্দোলিত হয়না- তা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারিনা। বলা হয়ে থাকে সঙ্গীত হচ্ছে সর্বরোগের মহৌষধ। এটি মানবতার বিস্ফোরণকারী অনুভুতি।আমরা কোন ধর্ম, কোন সংস্কৃতি থেকে আগত তা এখানে মূখ্য বিষয়না, সঙ্গীতের স্পর্শে আমরা সমানুভূতিতে কাতর হই। যোগাযোগের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো সঙ্গীত। এমনকি ভিন্ন দেশের ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষে হলেও সঙ্গীতে মজে সবাই। ভাষা না বুঝলেও সঙ্গীত বুঝতে অসুবিধে হয়না।ক্রিস্টিয়ান নেস্টল বভীর মতে “সঙ্গীত হলো মানুষের মৌলিক চাহিদার মতোই; খাবার, কাপড়, আশ্রয় এবং সঙ্গীত”।

সঙ্গীত মেজাজকে চাঙ্গা করে; মনকে শান্ত করে, অশান্তও করে। কানে মধুর সুর ঢালে; হৃদয়ে স্বাধের আমেজ আনে।গানের আরেকটি ভালো দিক হলো গান যখন আমাদের ধাক্কা দেয়, আমরা ব্যথা অনুভব করিনা।উল্টো আরাম লাগে অনেকটা প্রিয়জনের সাথে অন্তরঙ্গ রতিক্রিয়ার মতো।প্লেটো বলছেন “সঙ্গীত হলো নৈতিক আইন। এটা আত্মাকে সার্বজীননতা দেয়, মনকে ডানা মেলার ক্ষমতা দেয়, কল্পনাকে উড়াল দেয়ায়, জীবনকে উল্লাস আর সবকিছুকে মাধুর্য দেয়”।সঙ্গীত ভয় দূর করে, অসহায়ত্ব দূর করে, চিত্তকে হৃদ্ধ করে।

সঙ্গীত আমাদের অবসরকে মধুর করে, অপেক্ষমান সময়ে সঙ্গীতের চেয়ে ভালো সঙ্গী আর কী হতে পারে? সঙ্গীত আমাদের পালাতে সাহায্য করে। জীবনের ঝড়-ঝঞ্জা থেকে, প্রতিকূল অবস্থা থেকে। মজার বিষয় হলো আপনি যদি দুঃখী না হন, তাইলে আপনি সঙ্গীত বুঝবেননা, বুঝলেও মর্মে পৌঁছবেনা। একটি গান শুধু একটি গানই না। কখনো কখনো গান গানের থেকেও বেশি। এর অনেক ব্যাপ্তি আছে। এর গভীরতা এত হৃদয়গ্রাহী হয় যে তা শুধু ভাষায় ব্যখ্যার অতীত৤

একটি ভালো গান সুর তাল লয় কথার সুসজ্জিত কারুকার্যের সুসমন্বিত রূপে সুগঠিত হয়। যেন একটি ছোটগল্প, ‘শেষ হয়েও শেষ হইলোনা’ রকমের একটা আবহ তৈরী করে। কেমন যেন একটা রহস্যের আলো ছায়া খেলা খেলে।দীর্ঘ প্যানপ্যানানির ক্লান্তি থাকেনা, এত সংক্ষিপ্ত-সুমধুর হয় যে ‘আরো শুনতে চাই’ রকমের তীব্র আকাঙ্খার মাঝেই শেষ হয়ে যায়। সুরের জটিলতার কুটিল প্যাচ নয়, সরলতার আবহে স্নিগ্ধ সুর যা ক্লান্ত-শ্রান্ত-অন্যমন্স্ক পথিক থমকে দাড়িয়ে চমকে শুনে। চকিতে চক্ষু মুদে হৃদয়ের ঢাকনা খোলে দেয় সে সুরের পানে।

অনেক সময় সেরা গান অথবা সেরা শিল্পীর তকমা দেয়ার উদ্দেশ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথাকথিত জরীপ করা হয়।প্রশ্ন হলো এসব জরীপে অংশগ্রহণকারী কারা? তারা কি সমগ্র শ্রোতাদের প্রতিনিধিত্ব করে? তারা কি আদৌ শ্রোতা? শ্রোতা হলে কেমন মানের শ্রোতা?বস্তুত কোন গানই অন্য গানের সাথে প্রতিযোগী হতে পারেনা। গোল্লাছুট খেলোয়াড়ের সাথে যেমন ক্রিকেট খেলোয়াড়ের প্রতিযোগিতা হতে পারেনা।ভিন্ন ভিন্ন গান ভিন্ন শ্রোতার নিকট ভিন্ন ভিন্ন আবেদন সৃষ্টি করে। আবার একই গান একই শ্রোতার নিকট সময় ও স্থান ভেদে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা বহন করে। শিল্পীভেদে, শ্রোতাভেদে, স্থান, কাল, পাত্র ভেদে একই গানে ভিন্নরকমের আমেজ তৈরী হয়।গান শোনার পরিবেশ বা আবহ সৃষ্টি না হলে গান শুনে তৃপ্তি আসে না। কোন কোন গান একা শুনতে ভালো লাগে; যেমনটি কাঁদতে একা ভালো লাগে। কোন কোন গান সঙ্গী/লোকজনের সমাগম না হলে জমেনা, যেমনটি হাসির জন্য সঙ্গী লাগে। বৃষ্টির সময়ের গান আর রোদেলা দুপুরের গান এক রকম নয়; সকালে যে গান ভালো লাগে বিকালে সে গান বিতৃষ্ণা লাগতে পারে।

সঙ্গীত কী না করে? সঙ্গীত আমাদের প্রেমে ফেলে, দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ করে; সঙ্গীত আমাদের বিদ্রোহী করে, যুদ্ধে ধাবিত করে, ধ্বংসাত্মক করে তুলে; সঙ্গীত আমাদের বাউল বানায়, পাগল বানায়, ফকির বানায়।সঙ্গীত কখনো মিথ্যা বলেনা, সঙ্গীত পুরো পৃথিবীকে পাল্টে দিতে পারে কারণ সঙ্গীত মানুষকে পরিবর্তন করে। সঙ্গীত আমাদের মনে যে ধুলো-ময়লা জমে তা দূর করে দেয়। সঙ্গীত আমাদের সংগতি বাড়ায়, অসঙ্গতি কমায়। শব্দ যখন ব্যর্থ সঙ্গীত তখন কথা বলে। গান দেখার জন্য তৈরী হওয়া উচিত নয়। গান নির্মিত হবে শোনার জন্য। চোখের জন্য নয় কানের জন্য।তাইতো অস্কার ওয়াইল্ড বলছেন “মন্দ গান হলে মানুষ শুনেনা, ভালো গান হলে মানুষ কথা বলেনা”, আর জর্জ বার্ণার্ড শ বলছেন “অপটো বা কাঁচা শিল্পীদের গান জাহান্নামের মতোই”

সঙ্গীতে ডুবি, সঙ্গীতে মরি!আমলার হাজারো কাজের চাপের মধ্যে সঙ্গীতই পারে তাঁকে ক্ষণিকের প্রশান্তি দিতে।  শুভকামনা সকলকে!

-ড. সফিকুল ইসলাম।

(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )

Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD
error: Content is protected !!

My Shopping Cart