কেবল অর্থের পেছনে না ঘুরি
কেবল অর্থের পেছনে না ঘুরি।
১.
এ উপদেশ না দেওয়াই ভালো। কেউ শুনবেন না। উপদেশের কার্যকারিতা খুব কম। যেচে উপদেশ দিলেতো অনেকে বিরক্ত হন। উপদেশ যে নেয় তার ভিতরে গোলমাল আছে। না হলে সে উপদেশ চায় কেন? উপদেশ যে দেয় তারও গোলমাল আছে। উপদেশ যে দেয় সে অন্যকে দিলেও আসলে নিজেকেই শোনাচ্ছে। নিজেকে বশে আনতেই উপদেশ দেয়। আগের দিনে প্রিচিং বা ধর্মোপদেশ দিতো। আগে বাপচাচারা বা বয়োজ্যেষ্ঠরা বাচ্চাদেরকে বলতো “আমি বলছি তোকে শুনতেই হবে।“ বুকে থাপ্পড় দিয়ে আওয়াজ করে বলতেন। মানে হচ্ছে বয়োজ্যেষ্ঠরা যাই বলুক কনিষ্ঠরা শুনতে ও মানতে বাধ্য। কিন্তু এখন আর প্রিচিং এর যুগ নেই। এখন ব্লেসিং এর যুগ। জ্ঞানের যুগ, যুক্তির যুগ, ও বুদ্ধির যুগ। জোর করে বাধ্য করা যায় না। বড়জোর কাউকে চুপ করাতে পারবেন। মানাতে হলে বুদ্ধি দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে, কার্যকারণ দিয়ে, যথোপযুক্তভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
.
চীনের সবচেয়ে প্রভাবশালী চিন্তাবিদ কনফুসিয়াস। কনফুসিয়াস সম্পর্কে লোকজনের ধারণা ছিল খুবই উচ্চ।লোকজন বিশ্বাস করতো যেহেতু তিনি এত জানেন সেহেতু তিনি নিশ্চয়ই স্বর্গে যাওয়ার উপায় জানেন। তো স্বর্গে যাওয়ার উপায় জানার জন্য হাজার হাজার লোক তাঁর কাছে আসা শুরু করলো। ওইসময় কনফুসিয়াস একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিলেন। তৎকালীন সকল কবির শ্রেষ্ঠ কবিতা নিয়ে একটি সংকলন করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন।একদিন তিনি নিজের ছেলেকে ডেকে এনে বললেন, বাবা তুমি জানো লোকজন বিশ্বাস করে যে আমি স্বর্গে যাওয়ার পথ জানি। কিন্তু তুমিতো আমার ছেলে। তোমাকে আমি মিথ্যা কথা বলতে পারিনা। আমি আসলে স্বর্গে যাওয়ার পথ জানিনা।
তবে একটা কথা বলতে পারি। তুমি যদি এ বইটি পড়ো তবে স্বর্গে গেলেও যেতে পার। তবে যদি না পড়ো তবে স্বর্গে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। বইটি কীসের বই? কবিতার সংকলন।কবিতার বই। কবিতা কী করে? মানুষের মনকে সুন্দর করে। যার মন সুন্দর হয়নি সে কী করে স্বর্গে যাবে?শুধু কবিতা? সঙ্গীতে, কলায়, বইয়ে, ধর্ম, আলোকিত মানুষ, সঠিক সহচরীর সান্নিধ্য কোথায় নেই স্বর্গ ?
রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন,
‘‘আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ,
তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান॥
চারিদিকে কত কিছু! কত জ্ঞান কত প্রাণ খেলা করছে। বেছে বেছে সংগ্রহ করতে পারলেই জীবন আলোকময়। তবু মানুষ টাকার পেছনে, জাগতিক ভোগের পেছনে ঘুরে।
………..
২।
মানুষ আজ সব ফেলে টাকার পেছনে ছুটছে। কোন কিছুইকেই একমাত্র অবলম্বন ভাবতে নেই। টাকা টাকা কেন যে করি আমরা! কত টাকা দরকার এ জীবনে?
.
সিসিফাসের গল্প নিশ্চয় সবাই জানেন। সে একটা পাথর সারাদিন পাহাড়ে ঠেলে নিয়ে যায়। উপরে উঠার ঠিক আগ মূহূর্তে পাথরটি আবার পড়ে যায়। পরের দিন আবার ঠেলে উপরে তোলে। আবার পড়ে যায়। এভাবে ঠেলতে ঠেলতে জীবন শেষ। উপরে তোলা আর হয়না। সাপলুডুর জীবন। সাপের মুখে হারিয়ে যেতে পারি বা সব ফাঁদ পেরিয়ে চলে যেতে পারি অনেক উপরে।
………………
৩।
এক লোক দ্রুততম মানব। একদিন সে রাত তিনটার সময় বুলেটের বেগে থানায় উপস্থিত। কী অবস্থা জিজ্ঞেস করার পর সে বললো, “আমি ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম যে ঘরে চোর ঢুকেছে। ঢুকে কাপড়-চোপড়, থালাবাটি, সোনার গয়না সব গুছিয়ে প্রস্তুত করেছে।পরে সব নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। তখন বললাম দাঁড়াও। সাথে সাথে চোর ব্যাটা দৌড় দিল। আমি হলাম সেরা দৌড়বিদ। আমার সাথে সে দৌড়ে পারবে? আমিও দিলাম দৌড়। এমন দৌড় দিলাম যে ব্যাটা চোর এখনো তিন মাইল পেছনে। আমার সাথে ব্যাটা পারবে? .
সব ফেলে এক বিষয়ে মশগুল হলে, ওই বিষয়ে সফল হওয়া যায় তবে আসলে কিছুই অর্জন হয়না! অনুরূপভাবে টাকার পেছেনে, বস্তুর পেছনে ছুটে বেড়ালে বেলাশেষে শূন্যই হবে ফল।
………………..
৪।
রবীন্দ্রনাথ একবার একটি বিচ্ছিন্ন পা দেখেছিলেন। বীভৎস পা। পরে জেনেছেন যে এটি একজন সুন্দরীর পা। ভেবে পাচ্ছিলেননা যে একজন সুন্দরীর পা এমন বীভৎস হতে পারে! সুন্দরীর পা নিয়ে কত কবিতা লেখা হয়েছে! “যাহা যাহা অরুণ-চরণে চলই । র্তাহ তাহ থল-কমল-দল খলই “। আসলে পুরো মানুষটির সাথে থাকলে পা খুব সুন্দর হয়। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সুন্দর নয়। জগতের সব সৌন্দর্যের সাথে অর্থকড়ি কিছু থাকলে ভালো। শুধু অর্থ কেবল ওই বিচ্ছিন্ন পা এর মতোই বিভৎস। জীবন যত প্রসারিত তত সুন্দর। .
.
সারা ঢাকার সব হোটেলে, ঘরে, সবখানে কাচ্চি বিরিয়ানি হলে কাচ্চি বিরিয়ানি ভালো লাগবেনা। রেস্তোঁরা বলেন আর ঘর বলেন সবখানে ভ্যারাইটি থাকা ভালো। বিচিত্র হওয়া ভালো। বাগানে এক ধরণের ফুলের চেয়ে হাজার ফুলের সমারোহ সুন্দর। মানুষ হবে অনেক বড়; সাগরের মতো বিশাল। বিশালতাকে ধারণ করার জন্য প্রসারিত মন চাই। একমাত্রিকতা নয় বহুমাত্রিকতা দরকার।
জুলাই, ২০১৭ ব্রিসবেন। ড. সফিকুল ইসলাম।
.
-ড. সফিকুল ইসলাম।
(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )