Detail

Home - সমাজ ও ধর্ম - নিজের খুঁড়া গর্তে নিজেই পড়তে হয়

নিজের খুঁড়া গর্তে নিজেই পড়তে হয়

অনেক কাল আগের কথা। প্রায় বছর দশেক বা বেশি। কোন একটা জেলায়  চাকুরি করতাম। তো সে জেলার এক ইউনিয়নের  একজন মুরব্বী ছিলেন। বয়স প্রায় আশির কাছাকাছি হবে। উনি আবার একটি দলের ইউনিয়ন শাখার সভাপতি আছেন প্রায় ৩০ বছর যাবত। সবাই তাকে একনামে চেনে। ইউনিয়নের সকল কাজে তিনি থাকেন। শিক্ষা, সম্পত্তি, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, প্রভাব, বলয় সব আছে। সবকিছু ভালোই চলছিল। সে বাড়ির বড় বড় প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, প্রবাসীরাও নামে গুণে অনন্য।

উনার এক ভাতিজা ছিল। যিনি আবার ইউপি মেম্বার। ভাতিজাও চাচার আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে প্রভাবশালী হয়েছে। ভাতিজা যাই করে, মানুষ চাচার কাছে নালিশ করলে চাচা উড়িয়ে দেন। দেখছি বলে দেখেননা, শাসন করেননা, এড়িয়ে যান। ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই মেম্বার এমন হলো যে, মানুষের জমি দখল করে, টাকা নিয়ে মেরে দেয়, সালিশ করে অন্যায় রায় দেয়, কমিউনিটি ক্লিনিকের রুম দখল করে পোল্ট্রি পালন করে, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অফিস দখল করে মাছের খাবার রাখে, আরো কত কি। যত কিছুই হোক চাচা যেহেতু মুরব্বী সবাই চাচার কাছে বিচার দেয়। চাচাও দেখছি দেখবো বলে এড়িয়ে যায়। বিচার আচার আর হয়না। ভাতিজা মেম্বারের হুমকি ধামকি বাড়তে থাকে। গ্যাংও বড় হতে থাকে। এমনকি সরকারি কাজের, এলজিডির কাজের, ত্রাণের কাজের, কাবিখার রাস্তা আধাআধি করে না করে টাকা মেরে দেন, লোকজন ভয়ে মুখ খুলেননা। চাচা দেখেও দেখেননা। স্থানীয় প্রভাব আর চাচার ছায়ায় দিনে দিনে ভাতিজা মেম্বার মহীরুহ হয়ে উঠে। যাকে সামলানো আর কোন উপায় নেই।

এভাবে দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, যুগ যায়। পরে একদিন চাচা দেখলো ভাতিজা তার আর এখন শুধু গ্রাম ও ইউনিয়নের অন্যদের বিষয় আশয়ে থেমে নেই। স্বয়ং চাচার ও ওই বাড়ির সকল প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের বাড়ি, পুকুর, ঘর তিনি দখল নিয়ে নিচ্ছেন ধীরে ধীরে। এখন চাচার সুনাম ও প্রভাব বেশি থাকলেও ভাতিজারও প্রভাব ও লাঠি অনেক হয়েছে। ভাতিজা এমন বাড়া বাড়ছে যে চাচার কথা আর শুনেনা। চাচার সম্পদ, বাড়ি, ঘর, পুকুর, জমি ইত্যাদি বেদখল করে ইচ্ছামতো ব্যবহার ও ইজারা দিয়ে মেম্বার টাকা কামাচ্ছেন। ওই বাড়ির যারা প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব যারা ঢাকায় থাকেন,যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী সবার সবকিছু এখন মেম্বারের দখলে। কারো কোন কথাই আর মেম্বার শুনেনা।

সবাই মিলে বসে এমনকি ইউনিয়নের ৩০ বছর ধরে যে প্রবীন নেতা সেই চাচাও মেম্বারকে আর থামাতে পারেনা। কয়েক বছরে কিছুতেই সামলাতে না পেরে অতিষ্ঠ হয়ে এসি ল্যান্ডের কাছে অভিযোগ দেন ও থানার ওসীর সহায়তা চান। ওসী সাহেব তাদের বাড়িতে গিয়ে সকল হুমড়া চোমরার উপস্থিতিতে সালিশ করেও বিষয়টার কোন সুরাহা করতে পারেননি। ওসী সাহেব চলে আসার পর মেম্বার আবার যেই লাউ সেই কদু।

প্রবাদ/নীতিকথা:

এক. দা এর চেয়ে আছাড় বড় হলে সে দা দিয়ে আর কাজ হয়না।

দুই. ক্ষেতের ইটা ক্ষেতেই ভাঙ্গা হয়। অন্যত্র নেওয়া হয়না।

তিন. দুধ কলা দিয়েই আমরা সাপ পুষি।

চার. পরের জন্য ফাঁদ পাতলে নিজের উপর আসবেই।

পাঁচ. হোয়াট গোজ এরাউন্ড কামস এরাউন্ড।

ছয়. যে অন্যের গায়ে হাত তুলতে পারে তোমার সামনে তোমার ছায়ায়,

একদিন সে তোমার গায়েও হাত তুলবে অন্যের সামনে অন্যের ছায়ায়।

সাত. নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায়না।

আট. অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয়না।

নয়.সময় আজ চায়নাতে কাল চিলিতে।

দশ. সময়ে চুপ থাকা পূণ্য, যখন সময় চুপ থাকার,
সময়ে চুপ থাকা পাপ, যখন সময় কথা বলার।

এগারো. প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, মন না থাকলে মানুষ হয়না।

বদ্দমূলে যার বাস

তাকে প্রগতির আলোয় নেয়া যায়

প্রগতিই যদি বদ্দমূলে হারায়

তার আলো কেবা জালায়?

-ড. সফিকুল ইসলাম।

(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )

Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD
error: Content is protected !!

My Shopping Cart