মোবাইল চুরি ও সকলকে অভাবনীয় তল্লাসী
মনে করুন একজনের বাসায় একটি মোবাইল হারানো গিয়েছে। বাসায় তখন কাজের লোক ছিল। এখন কাজের লোকটিকে জিজ্ঞেস করবেনা বা বিদায়ের সময় শরীর তল্লাসী করবেনা- এমন মানুষ আমাদের সমাজে কয়জন আছে? বা জিজ্ঞাসা করলেও পরোক্ষভাবে ভদ্রতার সহিত বা শালীনতার সহিত করবে- এমন কয়জন আছে?
আছে নিশ্চয়ই, এ দলে খুব কমই আমরা।
মনে করুন একজনের বাসায় একটি মোবাইল হারানো গিয়েছে। বাসায় তখন নতুন আত্মীয় বা গরীব আত্মীয় ছিল। এখন আত্মীয় লোকটিকে জিজ্ঞেস করবেনা বা বিদায়ের সময় শরীর তল্লাসী করবেনা- এমন মানুষ আমাদের সমাজে কয়জন আছে? বা জিজ্ঞাসা করলেও পরোক্ষভাবে ভদ্রতার সহিত বা শালীনতার সহিত করবে- এমন কয়জন আছে?
আছে নিশ্চয়ই, এ দলে খুব কমই আমরা।
যারা তল্লাসি করেনা বা দৃষ্টিকটু ব্যবহার করেনা, বা এসব ক্ষেত্রে সংযত আচরণ করেন, তারাই শিক্ষিত, দীক্ষিত, সামাজিক, সভ্য ও মানবিক নাগরিক।
আবার উল্টোদিকে ভাবি,
বিমানবন্দরে যখন আমাদের কাপড় বেল্ট খুলে চেক করা হয়-তখন আমরা অনেকেই খুব বিরক্ত বা বিব্রত হই। কারণ, আমরা জানি বেশিরভাগ মানুষই ভালো। অস্ত্র বা বোমা রাখেনা, সোনা বা মাদক চোরাচালানে জড়িত না। তবু সবাই আমরা চেকিং-এর স্বীকার হই। তার মানে এই না যে সবাই আমরা অপরাধী। কিন্তু আমাদের হাজার ভালোর মধ্যে নিশ্চয়ই দুএকজন খারাপ লোক আছে। তাদের ঠেকাতেই বাকিদেরকে চেকিং হয়রানি সইতে হয়। তাতে ব্যক্তিগত অপমানের কিছু নেই।
ঘরে চুরি হলে, একজন চুরি করলেও বাকি পাঁচজনের উপরও সন্দেহের চোখ পড়ে। সন্দেহ না করলেও কথাটা সবার দিকে এমনিতেই যায়।প্রতিষ্ঠানে চুরি করলেও এমনি ঘটে। প্রতিষ্ঠানে ৩০০ জন থাকলে প্রত্যেকের নামেই যায়। যদিও বেশিরভাগই ভালো।
মনে করি মোবাইলটি যখন একটি হলরুম থেকে চুরি হয়েছে, তবে মোবাইলটি না পাওয়া পর্যন্ত ওই কক্ষের সবাই সন্দেহের আওতায়। যদিও সবাই আমরা জানি যে মোবাইলটি একজন নিয়েছে। সবাই নেয়নি। কিন্তু সেটা মোবাইল পাওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবেনা। ভাগ্যক্রমে যদি মোবাইল পাওয়া যায় ও চোরকে ট্রেস করা যায় তবে ভালো। না করা গেলে কিন্তু আমাদের সন্দেহ এখনো অবধি সবার উপরই থাকে। পাওয়া গেলে মানিদের মান আল্লায় রাখে।
এখন মোবাইলের মালিক কী করতে পারে? সাধারণভাবে বলা যায় হয়তো মোবাইলে গেলে গেসে, এড়িয়ে যাওয়া ভালো হতো। ওই টাকার মোবাইল একটা কিনতে পারতো। মোবাইলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে আমরা জানি। তাই এসব মোবাইল ইমেইলের সাথে সিনক্রোনাইজ করে/ আইক্লাউড এড করে রাখলে সব পাওয়া যায়। আধুনিক মানুষ মাত্রই এসব বিকল্প রাখে। আর যদি আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু থাকে সেক্ষেত্রে সেটা মোবাইল নয়, অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যা কোনভাবেই হাতছাড়া করা যাবেনা বা হারানো যাবেনা। যেহেতু হাতে হাতে রাখেনি সেহেতু ততটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিলনা, তাই টেবিলে পাশে রেখেই অফিসিয়াল কাজ সেরেছে।
এখন মোবাইলের জন্য কী হলরুমের সবাইকে তল্লাসী করা যাবে? হ্যাঁ যাবে, আবার না, যাবেনা। দুটোই সঠিক নির্ভর করছে স্থান-কাল-পাত্র অনুসারে যথাযথভাবে উপস্থাপন ও রাজী করানো। হয়তো সবাইকে বসিয়ে অনুরোধ করে পুরো বিষয়টির একটি পটভূমি বলে, যুক্তি দেখিয়ে, বিনয়ের সাথে সকলকে রাজি করিয়ে তারপর তল্লাসির ব্যবস্থা করতে পারতো। শুধু বলা যে “আসল চোরটিকে ধরার জন্য আপনারা প্লিজ তল্লাসিতে সহযোগিতা করুন।“ ঠিকমতো বুঝিয়ে বলতে পারলে, যুক্তি দিলে, প্রেক্ষাপট তৈরি হলে নিশ্চয়ই রাজী হতো সবাই। যেমনটা বিমানবন্দরে রাজী থাকি। যাই হোক ঘটনার আকস্মিকতায় হয়তো স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা করে ধৈর্যের সাথে সমাধানে যেতে সবাই পারেনা। আর সবসময় সব মুহূর্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকেনা।
একটি শ্রেনীর বা জাতির বা পেশাজীবী একজন যদি চোর হয় বাকিদের সম্পর্কে আমাদের একটা জেনারালাইজ সন্দেহ বা ধারণা কাজ করে। যেমনটা আমরা বলে থাকি উকিলমাত্রই এরকম, শিক্ষক মাত্রই ওরকম , আমলা মাত্রই সেরকম, পুলিশ মাত্রই আরেক রকম, সাংবাদিক মাত্রই একরকম। যদিও ওখানে অনেক লোক ভালো আছে, তবু কতিপয় লোকের আচরণ সবার দিকে অনুমান তৈরি করে। স্বচ্ছতা ও প্রাতিষ্ঠানিক দৃঢ়তার অভাবে সকলকেই একপাল্লায় মাপি।
গর্ত অন্ধকার হলে আমরা হাত দিইনা, কারণ আমরা জানিনা সেখানে কী আছে। মণিমুক্তা হতে পারে, কিংবা সাপও হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাপই ভাবি!
সুতরাং বলা যায় কল্পিত ওই হলরুমে যারা ছিল তারা ওখানে যাওয়ার আগে সবাই শতভাগ ভালো ছিলনা আবার ওই হলরুম থেকে ফেরার পরেও তারা সবাই শতভাগ চোর হয়ে যায়নি। তাদের সম্পর্কে মানুষের মনে এতদিন যেরকম ধারণা ছিল সেরকমই আছে। তাঁদের কাজ-কর্ম দিয়েই তারা মানুষের মনে আছে। কীরূপে আছে তা গণমানুষের মন জানে। এবং সেটা গণমানুষের অংশ হিসেবে হলরুমের লোকেরাও জানবে।
মোবাইল হারালে কেউ সিনক্রিয়েট করে আবার কেউ সর্বজনগ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আবার কেউ কিছুই করেনা। চেপে যায়, এড়িয়ে যায়, ফু দিয়ে বিষয়টাকে মাথা থেকে সরিয়ে দেয়। সবার সক্ষমতা সমান নয়। কেউ প্রেমের জন্য খুন করে, কেউ প্রেমের জন্য সিংহাসন ছাড়ে আবার প্রেমের জন্য কিছুই করেনা, ভাবে ওসব ফালতু আবেগ।
মজার বিষয় হলো যাই ঘটুক এর মধ্যে কিছু তৃতীয় পক্ষ জোটে কিছু ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা জোটে। তারা পক্ষ নেয়। তারা এর মধ্যে ধর্ম, রাজনীতি, পক্ষ সব নিয়ে আসে। এনে এটার একটা বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা করেই তবে ছাড়ে।
যাই হোক, শেষ কথা হলো
তুমি আমি সব চোর,
কেউ ছাগল, কেউ গরু চোর কেউবা মানুষ চোর,
তুমি আমি সব চোর।
-ড. সফিকুল ইসলাম।
(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )