Detail

Home - Motivational - মামলা না করার উপদেশ

মামলা না করার উপদেশ

১।

আগের দিনের যাত্রাপালাতে বিবেক নামে একটি চরিত্র বা ডায়লগ থাকতো। নাটকের কাহিনীতে যত ভালো মন্দ অপরাধ বা ঘটনা্ই থাকুক না কেন, বিবেকের মুখ দিয়ে সকল ন্যায় ও সত্য কথা বের হতো, সকল বিবেচনাবোধ বের হতো, সকল আত্মজিজ্ঞাসা বের হতো। সকল গোপন তথ্য ফাঁস হতো, প্রকাশ্যে জনকল্যাণে ঠাসঠাস বলে যেতো।

তেমনি টিভি নাটক বা সিনেমাতেও এরকম দেখা যায়। একটা পাগলা রাখা হয়। যে পাগলের অভিনয় করে সে সমাজের সকল বেখাপপা বিষয় বা অসঙ্গতি ঠিক সবার মুখের উপর বলে দেয়, পাবলিকলি বলে দেয়, লোকসমাজের সকল গুমর ফাঁস হয়ে যায়।  সমাজের নষ্টকীটগুলোর সকল আকাম প্রকাশ হয়ে পড়ে। লোকে তখন পাগলকে পাগল বলে হেসে উড়িয়ে দেয়। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। ইয়ার্কি তামাশা করে।

এরকম পাগলা কিসিমের, বেকুব কিসিমের, হাবলা কিসিমের লোক প্রায় প্রতি গ্রামেই এক দুটো থাকে। এরা উল্টাপাল্টা চলে, সব বুঝে বা বুঝেনা কিন্তু সবকিছুতে থাকে। হাসাহাসি করে। মিটিং এ যায়, বিয়ে খায়,  মুসলমানি খায়, মরাবাড়িতে যায়। তথা সবখানে ওরা থাকে। জটিল সচেতন লোকেরা এদেরকে দেখেও দেখেনা। এদের উপস্থিতিকে পাত্তা দেয়না। তাই অনেক গোপন শলপরামর্শের বা অপকর্মের সাক্ষী হয়ে যায় এরা। সমাজে কে কোন অপকর্ম করছে তা সবাই না জানলেও এরকম পাগলা কিসিমের বেকুব কিসিমের হাবলা কিসিমের লোকগুলো সব জানে। এবং মাঝে মাঝে মুখ ফসকে বলেও দেয়। তবে সমাজ এসব কানে তুলেনা। হেসে ফেলে দেয়। ধমক দেয়। দুচারটা থাপড়া দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।

পাগলা কিসিমের, বেকুব কিসিমের, হাবলা কিসিমের লোকগুলোর আরেকটি দিক পাওয়া যায়। কপালগুণে হোক আর ভাগ্যের ফেরে হোক, এদের অনেক সম্পত্তি থাকে। বাপদাদা থেকে পায় বা সম্পদ থাকে। সেসব সম্পদের উপরে চোখ পড়ে স্থানীয় মাতব্বর, বা হঠাত বড়লোক হওয়া কালো টাকার মালিকের বা দালাল টাইপ লোকদের।  এরা নানা অজুহাতে ওই পাগল বা বেকুবের সম্পদ দখল বা নামমাত্র দামে কেনার নানান বাহানা করে।

এবং এ পর্যায়ে এরকম পাগলা কিসিমের, বেকুব কিসিমের, হাবলা কিসিমের লোকদের পক্ষে কাউকে পাওয়া যায়না। তাই যে পারে সেই এরকম পাগলা কিসিমের, বেকুব কিসিমের, হাবলা কিসিমের লোককে বা তার বউকে বা তার বাচ্চাদেরকে মারে, ঠকায়। ’

এসবক্ষেত্রে ভদ্রলোকেরা, সচেতনরা এড়িয়ে যায়। মাইর খাবার ভয়ে বা মামলা খাবার ভয়ে বা মিথ্যা অপবাদের ভয়ে।

তবু এরই মাঝে দুএকজন লোক প্রতিবাদ করতে দাঁড়িয়ে যায়। বা এরকম পাগলা কিসিমের, বেকুব কিসিমের, হাবলা কিসিমের লোককে বাঁচাতে নিজের পিঠ পেতে দেয়।

ফলস্বরূপ প্রতিবাদকারী কখনো মাইর খায়, কখনোবা মামলা খায়। জেল খাটে।

এ মামলা অপমানের নয়, সম্মানের। এ জেল খাটা কস্টের নয়, আনন্দের।

আর ওই পাগলা বা বোকারা আসলে পাগল নয়, বোকা নয়; দুনিয়ার চালাকির বোঝা হয়তো বুঝেনা, হয় সরল বা সত্যবাদী। শুধু লোভী ও ষড়রিপুর তাড়ণায় মজে থাকা সমাজপতিরা, জটিলরা, তথাকথিত সুস্থরা, চালাকরা তা বুঝতে পারেনা। এদের দেখার চোখ অন্ধ হয়ে যায়।

২।

সমাজের কিছু মানুষ ঝামেলায় পড়ে, মাইর খায়, জেল খাটে, ফাঁসিতে ঝুলে প্রধানত: দুই কারণে।

এক. অপকর্ম করলে যেমন চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, মাদক বা মানব পাঁচার, দালালি, বাটপারি, জবরদখল, প্রতারণা, খুন-ধর্ষণ, আত্মসাত, তথা যাবতীয় অসদুপায় ও অসদাচরণ। তথা সঠিক কারণে, সঠিক মামলায়।

দুই. ভালো কাজ করলে। যেমন ন্যায়ের পক্ষে লড়া, সত্য বলা, মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা, জনস্বার্থে কাজ করা, আর্তের পক্ষে কথা বলা, নির্যাতিতের পক্ষে লড়া ইত্যাদি। তথা মিথ্যা ঝামেলায় বা মামলায়।

প্রথমটির কারণে হলে মাইর খাওয়া বা জেল খাটা বা ফাঁসিতে ঝুলা অপমানের, অসম্মানজন, মানহানিকর, ও গ্লানিকর।

দ্বিতীয়টির কারণে হলে ঝামেলায় পড়া, মাইর খাওয়া বা জেল খাটা বা ফাঁসিতে ঝুলা সম্মানের, আনন্দের, মর্যাদার, আত্মতৃপ্তির। জগতের অনেক বড় বড় নেতা, বিজ্ঞানী, আলোকিত মানুষ, নবী-রাসুল, কিংবা সমাজের কম পরিচিত অতি সাধারণ সরল মানুষ, সোজা মানুষ দ্বিতীয় তালিকার অন্তর্ভূক্ত।

সুতরাং ঝামেলায় পড়া, মাইর খাওয়া বা জেল খাটা বা ফাঁসিতে ঝুলা সবসময় খারাপ নয়। কখনো কখনো অপমানের নয়, সম্মানের। কস্টের নয়, আনন্দের।

Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD
error: Content is protected !!

My Shopping Cart