মালাউন বলা কি সমীচীন?
শব্দটি খুব বেশি আলোচিত হচ্ছে। আমি নিজেও শুনেছি অনেকবার অনেকের মুখেই। বাল্যকালে যে গ্রামে বড় হয়েছি সে গ্রামেও। সে গ্রামের যারা বলতো আমি নিশ্চিত তারা শব্দটির মানে জানতো না, জানতো না ইতিহাসও। হয় তারা গালি হিসেবে বলতো অথবা বুলি হিসেবে বলতো। যারা গালি হিসেবে বলতো তারা রাগ প্রকাশে এটি উচ্চারণ করতো ঠিকই কিন্তু শালা গালি দেয়ার সময় যেরকম কল্পনা আসে (ওর বোন আমার বউ), সেরকম কোন ভাবনা করে গালি দিত না। গালি দিয়ে অন্যকে রাগ প্রকাশের জন্যেই শুধু গালি হিসেবেই গালি দিতো। আর যারা বুলি হিসেবে বলতো তারা কথায় কথায় হরহামেশায় প্রতি বাক্যের শেষেই ওই শব্দ বলতো। এমনকি একই সম্প্রদায়ের লোকও ওই শব্দ উচ্চারণ করে বুলি হিসেবে ঐ সম্প্রদায়ের বন্ধুকে ডেকে চুটিয়ে আড্ডা মারতো।হাসতে হাসতে ইয়ার্কি মেরেই। একেবারে সরল রসিকতা করেই। সে গ্রামের সবাই শব্দটির মানে না জানলেও আশেপাশের সব গ্রাম মিলে দু একজন বড় মাওলানা হয়তো শব্দটির মানেও জানতো। তবে উপমহাদেশে প্রথম যিনি শব্দটি বলেন ও ব্যবহার করেন তিনি যে বড় মাপের পরিকল্পনা করেই বুঝেশুনেই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কেন করেছিলেন, কিভাবে করেছিলেন এ নিয়ে থিসিস এন্টিথিসিস হতেই পারে।শব্দটির অর্থও আমি আজই জানলাম, জানলাম এর হালকা শানে নুযুলও। পরে ভেবে দেখলাম এরকম হাজারো শব্দ অনেকেই ব্যবহার করে বুঝে না বুঝেই। গালি বা বুলি হিসেবেই। হ্যা এরকম শত শত শব্দ সকল গ্রামে, সকল সম্প্রদায়ে, সকল ধার্মীকতায়, সকল রাজনৈতিক ধারণায় সকল দেশে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত রয়েছে। এ নিয়েও আলোচনা হতেই পারে।কিছু উদাহরণ চিন্তা করতে পারি, কাফের, মুরতাদ, বাতিল, ছোডলোক, চাড়াল, নমশুদ, নাস্তিক, মৌলবাদী, ঘটি, পতিতা, বন্ধ্যা, যবন, স্লেচ্ছ, কাটমোল্লা, মালু, মোহামেডান, ধর্মান্ধ, প্রগতিধারী, হাজার শব্দ আছে। স্থান, কাল, পাত্র, ক্ষেত্র, প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও অনেক ক্ষেত্রেই এসব গালির উদ্দ্যেশ্যমূলকভাবে ও পরিকল্পিতভাবে ব্যাক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহারও দেখা যায়।
আমজনতা কেন কী বলে সেটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু যখন সেলিব্রিটিরা, জ্ঞানীরা, প্রভাবশালীরা মাইক্রো, ম্যক্রো পর্যায়ে এসব শব্দ বলে, বা এরুপ বলে, বা এর পক্ষে বলে বা এর বিপক্ষে বলে তখন আর বিষয়টা বুলি বা গালি থাকে না। তখন সেটা সাধারণ কথা থাকেনা। বেফাঁস বক্তব্য বা মন্তব্য বা কথাটি আসলে হাজারো ঘটনার দৃশ্যের পরিণামে মহাকাল পেরিয়ে লালিত অভ্যাস ও বিশ্বাসের স্বতঃস্ফুর্ত উদগীরণ হয়। ফেসবুক স্টেটাসটি বা আন্দোলনের স্লোগানটি তখন হাজারো চিন্তার নব পরিকল্পনার বৈচিত্ররূপ ধারণ করে অদৃশ্য শত-উদ্দেশ্য বা ব্যাকআপ নিয়ে হাজীর হয়।
-ড. সফিকুল ইসলাম।
(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )