ভালোবাসা দিবস ও অনুভাবনা- এক
ভালোবাসুন নিজেকে। নিজেকে যে ভালোবাসতে পারে না সে অন্যকে কখনোই ভালোবাসতে পারে না। নিজেকে ভালোবেসে যত্ন নিন, আদর করুন, খেয়াল করুন, কেয়ার করুন।স্বমহিমায় ফুটিয়ে তুলুন। নিজেকে নিজে ভালো না বাসলে কে আপনাকে ভালোবাসবে? তাই নিজেকে ভালবাসুন, নিজেকে গড়ুন, ফুটান, প্রস্ফুটিত করুন, গভীর করুন, মহান করুন, সমৃদ্ধ করুন, ছোঁয়া দিন, প্রাণ দিন, সজীবতা দিন, নিজেকে ভালোবাসায় ভেজান, নিজেকে প্রেমে ডুবান। আপনি যখন প্রস্ফুটিত হবেন তখন আপনা আপনিই আপনার সুগন্ধ আপনার কাছের মানুষ, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট, বিশ্ব তথা সৃষ্টিজগত পাবে। সবাই আপনার সৌন্দর্যে অবগাহনে আকৃষ্ট হবে, পেয়ে সমৃদ্ধ হবে। তাই নিজেকে ভালোবাসুন, অমলিন রাখুন, খুশি রাখুন, সতেজ রাখুন মনকে ও সজীব রাখুন শরীরকে।
নিজকে নিজে ভালোবাসুন। নিজকে নিজে ভালো না বাসলে উচ্ছন্নে যাবেন। আপনাকে যে ভালোবাসবে সেও উচ্ছন্নে যাবে। ও হে ভালো কথা, যে উচ্ছনে যেতে পারেনা সে ভালোবাসতে পারেনা! ভালোবাসতে পারার প্রথম শর্ত হলো উচ্ছন্নে যাওয়া, ভ্যাগাবন্ড হওয়া, বাতিল হওয়া, আবুল হওয়া, মফিজ হওয়া, মাতাল হওয়া, বোকা হওয়া, সোকা হওয়া, আকইম্যা হওয়া, বাদাইম্যা হওয়া, ভবঘুরে হওয়া! আমি উচ্ছন্নে যাবো- এটাই আমার অ্যাম্বিশান যে বলতে পারে সেই ভালোবাসতে পারে। কী মাথা ঘুরছে? মাথা যার ঘুরে, মাথাপাগল যে সেই ভালোবাসে!
আপনি কি রাষ্ট মানেন? দেশ মানেন? আইন কানুন মানেন? সমাজ মানেন? সামাজিক আচার মানেন? আপনি কি পরিবার মানেন? পারিবারিক অনুশাসন মানেন? তাইলে আপনি খুবই ভালো নাগরিক। আপনি এসব নিয়ম কানুন আর আইনের সাথেই প্রেম করেন, ভালোবাসা করেন। আপনাকে দিয়ে আর অন্য কারো সাথে বা অন্য কিছুর সাথে ভালোবাসা বা প্রেম হবে না।টুনাটুনির সাথেওনা, নতুন কোন আবিস্কারের সাথেওনা, নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টার সাথেওনা, স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ন্যায়ের কোন আন্দোলনেও না।
আপনি কি ধার্মিক? ধর্ম খুব মানেন? ধর্মের নিয়ম-কানুন, আচার-অনুষ্ঠান সব অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন? তবে আপনি খুবই ভালো ধার্মিক। আপনি ওই ধর্ম ও তার অনুশাসনের সাথেই প্রেম করুন। এটাই আপনার ভালোবাসার একমাত্র জায়গা। এটাই আপনার ভ্যলেন্টাইন দিবস বা বছর। বা আপনি অন্য যে নামেই ডাকুন। আপনাকে দিয়ে আর অন্য কারো সাথে বা অন্য কিছুর সাথে ভালোবাসা বা প্রেম হবে না।টুনাটুনির সাথেওনা, নতুন কোন আবিস্কারের সাথেওনা, নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টার সাথেওনা, স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ন্যায়ের কোন আন্দোলনেও না।
আপনি কি পুজিবাদ বিরোধী? এজন্য ভালোবাসা দিবস পালন করবেন না? আপনার বিদেশী ব্যংকে হিসাব আছে কিনা, আপনার পরণে ব্রান্ডের জামা আছে কিনা, আপনার চাকুরিটি পুজিবাদের সাথে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানে কিনা, ইত্যাদি একবার চেক করে নিয়েন। সব যদি পুজিবাদের হয়, তাইলে আর বেচারা ভালোবাসা দিবসের উপরে দায় দিয়ে কী লাভ?
ভ্যালেনটাইনের মতো ভালোবাসতে হবে তা না। আবার কোন নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়ে ভ্যালেন্টাইনের মতো ভালোবাসা যাবে না তাওনা। আপনি ভালোবাসুন যা আপনার মন চায়। ভালোবাসায় কোন পাপ নেই, কোন হীনমন্যতা থাকা বা কুপমন্ডুকতা থাকা সমীচীন নয়। তাই করুন নিজের মন চায় যা। আপনি যা বিশ্বাস করুন তাই করুন। সেটা সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম, তত্ত্ব কোন কিছু দ্বারা নিষেধ করা আছে কি নেই সেটা অপ্রাসঙ্গিক। আপনি আপনার নিজের বিশ্বাস অনুসারে ভালোবাসুন। সৃষ্টির যা কিছু আপনার ভালো লাগে তাই ভালোবাসুন। পাখি ফুল ফল কিংবা মানুষ, কর্ম, জন যা ভালো লাগে তাই ভালোবাসুন। ভালোবাসায় মুক্তি। নিজের কাছ থেকে মুক্তি, ষড়রিপু থেকে মুক্তি, বিশ্বভ্রমান্ড থেকে মুক্তি। কী ভয় লাগে? ভয় আছে মানেই প্রেমের গভীরতাও আছে!
ভালোবাসা মাত্রই টুনা-টুনির ভালোবাসা তা নয়। মানুষ যে কতকিছু ভালোবাসে! কেউ কাজ ভালোবাসে কেউ কাজ না করতে ভালোবাসে। কেউ গান ভালোবাসে কেউ নাচ ভালোবাসে। কেউ প্রার্থণা ভালোবাসে, কেউ অবিশ্বাস করতে ভালোবাসে। কেউ পড়তে ভালোবাসে, কেউ না পড়তে ভালোবাসে। কেউ বিপরীত লিঙ্গের কাউকে ভালোবাসে, কেউ স্বলিঙ্গের কাউকে ভালোবাসে। এ এক মহাজগত। কত বিচিত্র যে ভালোবাসা! কেউ পূর্ণিমার রাতে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে ভালোবাসে, কেউ পূর্ণিমা দেখতে সারারাত জেগে কাটিয়ে দেয়। কেউ টুনির ভালোবাসার জন্য সিংহাসন ছেড়ে বনে যায়, কেউ সিংহাসনে আসীন হতে জগতের সবার প্রেম ভুলে যায় , সবার সাথে বিশ্বাসঘতকতা করে। সুতরাং ভালোবাসুন তাই যেথায় আপনার মন স্থির হয়, চিত্ত কলুষিত না হয়। ভালোবাসুন পরিবারকে ,ভাইবোনকে, সমাজকে, জাতিকে, মানুষকে, সৃষ্টিকে বা সৃষ্টির কল্যাণে যে কোন প্রচেষ্টাকে। পরিকল্পনা করে কিছু হয়না আসলে। প্রেম বা ভালোবাসাতো নয়ই। কান্ডজ্ঞানহীন কিছু করা উচিতনা। তবে কান্ডজ্ঞান রেখে ভেবেচিন্তে ভালোবাসা হয়না।
-ড. সফিকুল ইসলাম।
(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )