’’তুই আমারে চিনস?’’ যারা বলে তাদের পরিচয়
- ‘তুই আমারে চিনছ‘ বলে যখন নিজের পরিচয় দিতে হয়, জোরে কথা বলে, গাল-নাক-মুখ খিচে কটু কথা বলে যখন নিজের স্বরূপ প্রকাশ করতে হয় ,- সে সমাজে সভ্যতা ভব্যতা আর নেই তা বলা যায়। শ্রমিক মজুর শ্রেণিতে এসব হয় অহরহ, কিন্তু তা যখন শিক্ষিত সমাজেও হয়, তখন বুঝতে হবে তারা নিচে নেমে গেছে অনেক। মানে তারা নিজেরাও বিশ্বাস করে যে তার শিক্ষা, পদ, পদবীর কোনো মূল্য নেই। মূল্য কেবল চিতকার, চেচামেচি, ধমক, হুমকি ইত্যাদিতে।
- নিজের দৃশ্যমান পরিচয় থাকার পরেও যখন অন্য আরও পরিচয় দেয় তখন তার দৃশ্যমান পরিচয়কে সে নিজেই ধুলায় মিশিয়ে দেয়। এবং এর ব্যাকগ্রাউন্ড পরিচয়টুকুও হেয় হয়ে হেট করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সংবেদনশীল, রুচিশীল, মাত্রাজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ মাত্রই তা বুঝেন।
- আমার নিজের সার্ভিসসহ অন্য প্রায় সব সার্ভিসের কাছে দুরকম ব্যবহার পেয়েছি। যখন সে বিপদে পড়ে বা প্রয়োজনে ফোন করে বা দেখা করে তখন তার বিনয়, ভদ্রতার প্রকাশ, খুব মিহি হয়। আর যখন আমি আমার প্রয়োজনে ফোন করি বা দেখা করি তখন তার স্বরূপ বেরিয়ে পড়ে, যেন একটি মানুষের ভেতর থেকে ‘একটি কুকুর ঘেউ ঘেউ করে উঠলো‘।
- যে কোনো পেশার মানুষের ডিগনিটি আছে, এবং তাকে সেভাবেই গুরুত্ব দিয়ে ডিল করা উচিত- তা আমাদের অনেকেই করে না। বেসরকারি করে না সরকারিকে, সরকারি করে না বেসরকারিকে। বড় মাপের কবি-লেখক-অভিনেতা-শিল্পীদেরও দেখেছি সরকারিদের নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে, আবার প্রয়োজনের সময় মিহি আচরণ করতে। এ ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আচরণ পেতে আমরা কেউই চাই না। রিকশাওয়ালা থেকে মন্ত্রী সবারই যথাযথ আচরণ পাওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে কেউ তেলে ভেসে যায়, কেউ অবজ্ঞায় তলিয়ে যায়।
- আমি নিজে পরিচয় না দিয়ে দেখেছি, কতিপয় ক্ষেত্রে সেবা পেতে ঝামেলা হয়েছে। আবার পরিচয় দিয়েও দেখেছি, পরিচয় দেওয়ার পর আচরণ মিহি হয়েছে কিন্তু সেবা দীর্ঘায়িত হয়েছে, অযথা প্রলম্বিত হয়েছে। তখন মনে হয়েছে যে পরিচয় না দিলেই ভালো হতো। আমাদের হীনতা একদম তলানিতে নেমেছে।
- ‘তুমি অন্যের সাথে সেই আচরণ করো, যেই আচরণ তুমি অন্যের কাছ থেকে আশা করো‘- এ ভাবনা থেকে আমরা শত যোজন দূরে। আমরা অন্যের কাছে শতভাগ অমায়িক ব্যবহার ও প্রম্পট সার্ভিস আর অন্যকে দিতে চাই কেবল অবহেলা আর ভোগান্তি।
- পাত্র-পাত্রিরা যা করার করেছে। এমনকি আমজনতাও পক্ষ নিয়ে নিয়েছে। ক বা ক-এর আত্মীয়রা ক পক্ষ, খ বা খ-এর আত্মীরা খ পক্ষ। ইনিয়ে বিনিয়ে কার দোষ বেশি বা কম বলার চেষ্টা করছে। কে শুরু করেছে, কে শেষ করেছে, কে জিতেছে কে হেরেছে ইত্যাকার বিলাপ জুড়ে দিয়েছে। অথচ সকল পক্ষই সকল পক্ষকে বাঁশ দিয়ে দিচ্ছে তথা গোটা সামাজিক ব্যবস্থার প্রকাশ যে হয়ে পড়েছে তার দিকে কোনো খেয়াল কারো নেই। দুই ব্রাহ্মণের সেই গল্প সবাই ভুলে গেছে। এক ব্রাহ্মণ যখন আরেক ব্রাহ্মণকে গরু বলে পরিচয় দেয়, আরেক ব্রাহ্মণ যখন অন্য ব্রাহ্মণকে ছাগল বলে -তখন গৃহস্থের এটা বোঝার বাকি থাকেনা যে এখানে কেউ ব্রাহ্মণ নেই। একজন গরু আরেকজন ছাগল। তাই গৃহস্থ তাদের সামনে পোলাও কোরমা না দিয়ে খড়কুটো কচুরি পরিবেশন করেছে।
- যতই নীতিকথা বলি, এটাও বাস্তবতা যে মানুষ হিসেবে যখন সাম্য ও ন্যয়বিচার পাবেনা, মানুষ তখন তার যত পরিচয় আছে সবটুকু বলবে, যতদূর চিল্লানো যায় ততদূর চিল্লাবে। যদ্দেশে যদাচার হিসেবে এর বিকল্প কি? যতদিন স্কুল কলেজ মক্তব মাদ্রাসা মন্দিরে সুশিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো না গড়ে উঠবে, যতদিন সরকারি বেসরকারি অফিসগুলোতে সাম্যর সাথে সেবা প্রদান ও বিচার প্রদানের প্রাতিষ্ঠানিক সহজ প্রক্রিয়া গড়ে না উঠবে ততদিন পর্যন্ত এ গলা উঁচিয়ে চিতকারই চলমান থাকবে।
- মোটা দাগে সবখানে পেশাদারিত্বের অভাব, মাত্রাজ্ঞানের অভাব, প্রত্যুতপন্নমতিত্বের অভাব, সৌজন্যতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। এখানেও তাই হয়েছে। ঘটনা একটি হলেও তা বিচ্ছিন্ন নয়। অহমিকা ও ক্ষমতার আস্ফালন, পেশাগত ঈর্ষা, কুতসিত পেশী প্রদর্শণ অত্যন্ত কদর্যভাবে প্রকাশিত হলো।
- রূঢ় বাস্তবতা হলো দেশে আইন-নিয়ম-কানুন থাকলেও তা বেছে বেছে ব্যবহার করা হয়। কারো জন্য সব ফাঁক খুঁজে ছাড় দেওয়া হয়। আর কারো জন্য লিটারাল নিয়ম উদ্ধুত করে কোনো ছাড় দেওয়া হয় না। ইচ্ছাকৃতভাবেই এই দুরকম ব্যবহার করে প্রত্যেকে প্রত্যেকের কর্মক্ষেত্রে ও ক্ষমতার বলয়ে। কেউ অফিসে, কেউ ট্রাফিকে, কেউ হাসপাতালে। সেখানেই সমস্যা।
- ব্যক্তিগতভাবে আমার সাথে সখ্যতা সব পেশার লোকের। অনেক ভালো মানুষ আছেন। ভিডিওটি দেখে আমার মনে প্রশ্ন এসেছে তিনজনই কেন রেগে গেলেন? তিনজনই খারাপ? না মনে হয়। হতে পারে কড়া রোদ, অফিসে যাওয়ার তাড়া, করোনার ঝুঁকিতে দায়িত্ব, রোজায় ধরেছে। সব মিলিয়ে মেজাজ সবার তিরিক্ষি ছিল। তাই যেন হয়। আর যেন এরকম না ঘটে। শান্তি, সম্মান, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ফিরে আসুক।
- গাড়িতে স্টিকার লাগাই কেন? ফুটানি করতে, সুবিধা নিতে, হয়রানি থেকে বাঁচতে, ঝাঁমেলা এড়াতে, মুই কি হনুরে প্রকাশে, নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করতে? সবগুলোই কারণ হতে পারে। নিজের ঢোল নিজে না পিডাইলে কে পিডাইবো? তাহলে মূল প্রশ্ন হলো, স্টিকার লাগানোর তাগিদ অনুভব করেছি কোন সামাজিক/ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা বাস্তব অভিজ্ঞতার কারণে? সেসব না পাল্টে কেবল স্টিকারে তাকালে হবে?
- শ্রেণিবিভাজন, নেপোটিজম, ছিল, আছে, থাকবে। তবু এগিয়ে যেতে হবে। গতকাল সন্ধ্যায় এক ডাক্তারের কাছ থেকে ফোনে সেবা নিয়েছি, আরেক পুলিশ ভাইকে এক গরীব আত্মীয়ের জন্য বৈধ একটা তদবির করেছি, আর ম্যাজিস্ট্রেট ও শিক্ষক তো ঘরেই আছে। সুতরাং পুরো ভিডিও দেখে কোনো পক্ষ নিতে পাারছিনা। সবার জন্য কেবল ভালোবাসা অনুভব করছি। ভালোবাসা নাও, ভালোবাসা দাও। এই স্লোগান মনে রেখো যেখানেই যাও।
admission Bangladesh bcs book review Climate Change Adaptation culture disaster disaster risk reduction Gender golpo life love memory milan motivation officer political economy relation religion story Success অর্থ অস্ট্রেলিয়া ইটালি এলামনাই কবি কবিতা গল্প চাকুরি ছোটগল্প জীবন প্রেম প্রেমের কবিতা বিসিএস বুক রিভিউ ভর্তি ভেনিস ভ্রমন মিলান যে কথা যায় না বলা সন্দেহ সম্পর্ক সুইজারল্যান্ড স্বপ্ন স্মৃতি