একটি হত্যার প্র্যাগমেটিক পোস্ট মর্টেম
একটি হত্যার বাস্তব পোস্ট মর্টেম
নয়ন গং রাম দা নিয়ে প্রকাশ্যে কুপিয়েছে। দৃশ্যত কে তার হাতে দা দিয়েছে তা ইনকোয়ারি করে বের করা হবে।
কিন্তু অদৃশ্যভাবে কে বা কারা তার হাতে এ ক্ষমতা দিয়েছে এভাবে দা দিয়ে কুপানোর?
কে বা কারা তার মনোজগতকে গড়েছে এভাবে প্রকাশ্যে কুপানোর? কারা তাকে বেপরোয়া আর নৃশংস সাহসী করেছে এমন?
তারা কারা? চলেন লিস্ট করি।
১. তাদের বাবা-মা/ভাই-বোন/প্রতিবেশী যারা সন্তানকে নিয়মমতো বড় করেনি, কোথায় যায় কী করে খবর রাখেনি। ছোট খাটো অনুশাসন দিয়ে তাছির করেনি। ‘সব পেতে হয়না‘ ‘সব করতে হয়না‘- এ শিক্ষা দেয়নি,
২. সেই স্কুল ও শিক্ষক যারা শুধু পাস ফেলের পড়াশোনা করায়, মানুষ বানানোর পড়াশোনা করায় না। চোখ খুলেনা, বিবেক খুলেনা, মনন খুলেনা, বিবেচনা বোধ তৈরি করেনা, ধৈর্য্য শেখায়না, ত্যাগ শেখায়না।
৩। স্থানীয় মুরব্বী, নেতা, প্রতিনিধি যারা এলাকায় যে কোন ঘটনায় এদেরকে ব্যবহার করেছে এবং এরা ছোটখাটো অপরাধ করলে আশ্রয় দিয়েছে, বাঁচিয়ে রেখেছে। ধীরে ধীরে বড় অপরাধ করেও ছাড় পেয়েছে। নিজের কুকর্মও করিয়ে নিয়েছে ফাঁকতালে।
৪। সেইসব লোক যারা নয়ন গং বিভিন্ন অপরাধ করার পরেও আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, শিথীলতা দেখিয়েছে, এড়িয়ে গেছে। জানা অজানা বিভিন্ন কারণে। বিচার করার বা বিচারের আওতায় আনার ক্ষমতা থাকার পরেও তারা তা করেনি। সেই তারা দায়ী।
৫। সেইসব অপরাধী যারা নিজেরাই অপরাধ করে, সুতরাং তাঁদের ছত্রছায়ায় নয়ন গং অপরাধ করলেও নয়নগংকে কিছু বলার কোন মনোবল বা সাহস রাখেনন্।
সুতরাং নয়ন গং একার সাহসে এ কাজ করেনি। তাঁদের পেছনে রয়েছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক হাজার অদৃশ্য ঘটনার সাহসের পরত, যা তাঁদেরকে ভিত্তি দিয়েছে, ব্যাকআপ দিয়েছে, করেছে তাদের অদৃশ্য প্রতিষ্ঠানকে মহাপরাক্রমশালী।
আর পথচারী নাগরিকদের পেছনেও রয়েছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অনেক অদৃশ্য ঘটনার ঝুঁকির পরত, যা তাঁদেরকে ভঙ্গুর করেছে, ভীতু করেছে, করেছে তাদের অদৃশ্য প্রতিষ্ঠানকে ভয়ার্ত।
এবং অভাবনীয় কষ্টের বিষয় আমি আপনি চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাবো যে এ তালিকয় আমার আপনার অতি পরিচিত/আত্মীয়/স্বজন/বন্ধু/কাছের/দূরের অনেকেই আছেন।
……………….
গরুকে যখন জবাই করা হয় তখন আশেপাশে থাকা গরু এগিয়ে আসেনা কারণ এরা বাঁধা থাকে। তবে এরা কাঁদে। এদের অনুভূতি আছে, কষ্ট আছে, মায়া মমতা আছে।
পাখিকে যখন মারা হয় তখন অন্য পাখিরা উড়ে যায় । কারণ পাখিরা ততটা বোঝেনা। কখনো কখনো কোন কোন পাখি ত্যাড়ে আসে ঠোকর দিতে। এর বেশি কিছুনা যদিও এদের অনুভূতি আছে, কষ্ট আছে, মায়া মমতা আছে।
মোরগ জবাইয়ের সময় অন্য মোরগেরা দেখেও দেখেনা! যদিও এদের অনুভূতি আছে, কষ্ট আছে, মায়া মমতা আছে।
এরা প্রতিবাদ করেনা, কারণ
এদের প্রখর অনুভূতি নেই, এদের প্রতিবাদ শক্তি নেই, এদের বুদ্ধি বিবেচনা নেই, এদের বোধ নেই, এদের পরিকল্পনা নেই, এদের সাংগঠনিক কৌশল নেই।
যদিও মানুষের অনুভূতি আছে, কষ্ট আছে, মায়া মমতা আছে গরু মোরগ পাখির মতো।
তবু
মানুষের খুন হওয়া মানুষ কখন চেয়ে চেয়ে দেখে?
যখন এদের প্রতিবাদ শক্তি থাকেনা, এদের বুদ্ধি বিবেচনা থাকেনা, এদের বোধ থাকেনা, এদের পরিকল্পনা থাকেনা, এদের সাংগঠনিক কৌশল থাকেনা।
থাকেনা কেন?
কারণ হয়তো এরা সজাগ শিক্ষিত সচেতন হয়নি কিংবা সব বাঁধা আছে কোথাও গরুর মতো। রশি আর খোটা দিয়ে। কী সেই রশি আর খোটা?
……………….
দুই প্রতিবেশী গ্রুপ ঝগড়া লেগেছে। যখন খুন জখমের উপক্রম। তখন একজন গিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে। মারামারি থামিয়ে দিয়েছে দুজনকে সরিয়ে দিয়েছে।
পরে দুই প্রতিবেশীর এক গ্রুপ গিয়ে মামলা করেছে। যে লোক মারামারি থামিয়ে দিয়েছিল তারে করেছে একনম্বর আসামী।
ভালো তো! ভালোনা?
সেটা বিষয়না, বিষয় হলো গিয়ে
ওই মামলাকারীদের কেউ কেউ আবার এখন
বরগুনার ঘটনায়, কেন লোকজন তাকিয়ে দেখেছে, ফিরাতে চেষ্টা করেনি- এ আক্ষেপ করতেছে।
ফেসবুক শেয়ার, স্টেটাস ও কমেন্ট করে গরম করে যাচ্ছে।
মাইরি যা দিনকাল! বাংলা মা আমার এসব হিপোক্রেটদের নিয়ে কী করবে?!
-ড. সফিকুল ইসলাম।
(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )