Detail

Home - সমসাময়িক - সরকারি কর্মচারিরা কি জনগণের চাকর নয়?

সরকারি কর্মচারিরা কি জনগণের চাকর নয়?

এ প্রশ্ন মনে আসার সাথে সাথে একই রূপে আমাদের মনে প্রশ্ন আসা উচিত, ব্যাংক কর্মকর্তা কি ব্যাংক মালিকের চাকর নয়? ইউনিলিভারের কর্মকর্তা কি ইউনিলিভারের মালিকের চাকর নয়? এনজিও কর্মকর্তা কি এনজিও মালিকের চাকর নয়? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকের চাকর নয়?গুগল কর্মকর্তা কি গুগল মালিকের চাকর নয়? যদি এসব প্রশ্ন মনে না আসে তবে সরকারি কর্মকর্তার জন্য এ প্রশ্ন আমাদের মনে আসবে কেন?যদি কেউ এসব ক্ষেত্রে চাকর বলার চেষ্টা না করি, তবে সরকারি কর্মকর্তাকে কেন করবো?

২। অনেকেই বলেন জনগণের চাকর কারণ জনগণের ট্যাক্স এর টাকার তাঁদের বেতন হয়। জনগণের টাকায় বেতন হয়, ভালো কথা। আপনার টাকায় কি বেতন হয়? জনগণ বলতে বাস্তবে কোন মানুষ কি আছে? জনগণ চাকর ডাকুক। আপনি চাকর ডাকতে যাবেন কেন?‘জনগণ‘ শব্দ বেইচা সারা পৃথিবী খাচ্ছে, আপনিও খেতে চান? আপনিতো আর জনগণ না।  আচ্ছা ধরে নিই, আপনিও জনগণ। আপনি যদি জনগণ হন, তাহলে সরকারি কর্মকর্তা নিজেও জনগণ। তাহলে জনগণের ট্যাক্সে বেতন হয় মানে হলো সরকারি কর্মকর্তার বেতন তার নিজের ট্যাক্সের টাকায় হয়, তার আত্মীয়স্বজনের ট্যাক্সের টাকায় হয়। কারণ তারাও জনগণ। তাহলে আপনি কোথাকার কে হে? যে ১৬ কোটি ভাগের এক ভাগ ট্যাক্স দেন যা আবার দেশের হাজারকোটি খাতে ব্যায় হয়; সেই হাজার হাজার কোটি ভাগের এক ভাগ ট্যাক্স দিয়ে সমগ্র সরকারি কর্মকর্তাকে চাকর বলার হিম্মত দেখান।দেশের লাখ লাখ সরকারি কর্মকর্তাও আপনার মতোই ট্যাক্স দেন্।তাঁদের ট্যাক্সের টাকায়ও হাসপাতাল চলে, রাস্তা হয়, এটা হয়, সেটা হয় যা আপনি ব্যবহার করেন। তাহলে কি আপনাকে সরকারি কর্মকর্তারা চাকর ডাকবে? হুম বুঝে শোনে কিন্তু!

৩। হ্যা যদি কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা আপনাকে সেবা না দিয়ে থাকেন, ভালো আচরণ না করে থাকেন, হয়রানি করে থাকেন; তবে আপনি তাকে অদক্ষ বলতে পারেন, হয়রাণি করেছেন বলতে পারেন, অন্যায়কারী বলতে পারেন, কর্তব্যে অবহেলা করেছে বলতে পারেন। প্রয়োজনে আপনি মামলা করতে পারেন। কিন্তু কোনভাবেই চাকর বলার কোন এখতিয়ার আপনার নেই। সংবিধান আপনাকে সে অধিকার দেয়নি।

৪। পাবলিক সার্ভিস এর বাংলা জনসেবা। সুতরাং যারা পাবলিক সার্ভিসে কাজ করেন তাঁরা জনসেবায় নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি। আপনার কর্মচারি নয়। সরকারের কর্মচারিও নয়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি। সংবিধান সে কথাই বলেছে। দেখুন সংবিধানের 21(2) “সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রে নিয়োজিত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।  প্রজাতন্ত্র তাঁকে নিয়োগ দিয়েছে। বেতনের বিনিময়ে তাঁরা সেবা দিবেন। সেবা দেওয়া তাঁদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সুতরাং আপনি সরকারের হোন বা বাইরের হোন, প্রজাতন্ত্রে নিয়োজিত কর্মচারিদেরকে কোনভাবেই চাকর বলতে পারবেননা। যদি তাঁরা দায়িত্ব পালন না করেন, তাঁকে ভুলগুলো বলে সমালোচনা করতে পারেন, অভিযোগ করতে পারেন, মামলা করতে পারেন। কিন্তু চাকর বলার কোন এখতিয়ার বা অধিকার কোনটাই আপনার নেই।

৫। আপনি যে পেশাতেই আছেন আপনি কি নিজেকে আপনার চাকুরি দাতার বা চাকুরিরত প্রতিষ্ঠানের চাকর বলে মনে করেন? মনে হয় করেন, তাই প্রজাতন্ত্রে নিয়োজিত কর্মচারিদের বেলায় আপনার মনে চাকর শব্দটা মাথা চারা দিয়ে উঠে।

৬। চাকর শব্দটাই আপত্তিকর। মার্কস এর ক্লাস স্ট্রাগল থেকে উদ্ভূত। এটা বলার মধ্য দিয়ে আপনি নিজেক উপরের তলায় তোলার উপায় খুঁজেন। আপনার মনোজগত পুঁজিবাদ আর কলোনিয়ালিজমের জালে আটকা পড়ে আছে। সেই জাল থেকে নিজেরে বের করেন। খোলস থেকে বের হয়ে কথা বলেন।

৭. সংবিধানে বলা আছে ‘রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।’ 7(1) এ এটাও বলা আছে “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে৷” সুতরাং যথাযথ পদ্ধতিতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি নিয়োজিত হয়, দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে তারাই এখতিয়ারপূর্ণ। সেখানে ভুল হলে আইনানুগ যে কোন সমালোচনা ও অভিযোগ আনতে পারেন। কিন্তু চাকর শব্দের উতপত্তি সংবিধানে নেই। পুরোপুরি আপনার মনোজগত থেকে উতসারিত।

৮। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই কিছু সরকারি কর্মচারীদের আচরণে নাক উঁচু ভাব আছে। যার কারণে বাইরের কিছু লোক এটার সমালোচনা করে ও বলে যে সরকারি কর্মচারিরা ‘জনগণের চাকর‘। ‘জনগণের চাকর‘ কথাটা বলার সময় ওইসব সিভিল গংদের ঘাড়ের রগ ফুলে উঠে, নাকমুখে একটা তাচ্ছিল্যের ভাব আসে, বলার স্বরে একটা ঝাঁঝ থাকে, মনের র্ইর্ষাটা উঁকি মারে, এই বলাটাা ওই নাক উঁচু আমলাদের আচরণের চাইতে আরও বেশি কলোনিয়াল, আরও বেশি হিংসাত্মক, আরও বেশি ধ্বংসাত্মক, আরও বেশি হীনমন্যতার, আরও বেশি ঘৃন্য। ওইসব সিভিল গংদের জন্য করুণা।

সিভিল সার্ভিসে কাজ করা মানে সিভিল সার্ভেন্ট না। চাকরি আর চাকরের যে সম্পর্ক বলছেন সেটাতো সব চাকরির বেলায়,। শুধু সরকারি কর্মচারিদের জন্য হবে কেন? সুতরাং এখানে শব্দ বিষয়না, বিষয় হলো বলার ধরণ, প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য।

মোদ্দাকথা হলো। রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের কর্তব্য রয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিদেরও দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। প্রত্যেকেই তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করা উচিত। যদি কেউ না করে তবে তার গঠনমূলক সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু কোন অযাচিত সীমালঙ্ঘণ নয়।

(প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মকর্তা হিসেবে আমি নিজেকে সবসময়ই একজন সেবক মনে করি, সেবা দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকি।সহজে সেবা দিয়েছি, দিবও। সকল নাগরিক সকল সেবা সহজে পাক সে আশাবাদ রইলো।)

-ড. সফিকুল ইসলাম।

(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )

Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD
error: Content is protected !!

My Shopping Cart