ব্রিসবেন
অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন সিটির মাঝখানে “রোমা স্ট্রিট পার্ক” অবস্থিত। ওখানে যাবো বলে স্বপরিবারে বেরিয়েছি। আমরা যে উপশহরে থাকি তথা রবার্টসন থেকে বিশ কিলো দূরে। বাসে যাবো তাই বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে হাঁটা ধরলাম। বাসা থেকে ২০০ মিটার দূরে। আগেই বাসের টাইম দেখে নিয়েছিলাম। এখানে বাসের টাইম দেখার জন্য অ্যাপস আছে। অ্যাপস সবসময় আপডেট থাকে। পাবলিক বাসের শিডিউল দেখে বের হলে বাস এর জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। কোন জায়গা থেকে কোথায় যাবেন তা সার্চ দিলে সম্ভাব্য সব রুট দেখাবে সময় উল্লেখসহ। তাই সহজেই সময় বাঁচানো যায় এবং বাস পেতেও কোন বেগ পেতে হবেনা। কিন্তু বাচ্চাদের নিয়ে পৌঁছতে পৌঁছতে একমিনিট দেরি হয়ে গেলো। তাই বাসটি মিস হয়ে গেলো। এখন পরের বাসে যেতে হবে। বাসস্ট্যান্ড নিয়ে আমার একটি জীবন দর্শন আছে।
বাসস্ট্যান্ডে বাস পৌঁছার আগে যদি আপনি পৌঁছান তবে কোন বাস আপনাকে নিয়ে যাবে না। আপনি যদি বাসস্ট্যান্ডে বাস পৌঁছার পরে পৌঁছান তবুও বাস অপেক্ষা করবে না। বাসের টাইমে বাস যাবে। বাস আগেও যেতে পারে আবার পরেও যেতে পারে। কিন্তু আপনি পরে গেলে বাস মিস করবেন, আগে গেলে অপেক্ষা করতে হবে! জীবনের অনেক কিছুই এমন। ঠিকমতো ঠিক টাইমে আমরা ধরতে পারি না। হয়তো ছিল, হয়তো আছে। শুধু ব্যাটেবলে ম্যাচ না করায় অনেক কিছুই মিস হয়ে যায়। তাই সময়ের বিষয় সময়মতো সন্তর্পনে সজাগ হয়ে ধরে ফেলতে হয়। নতুবা সব যাবে! বাসের মতোই মিস হয়ে যাবে! আবার মিস হয়ে গেলেও সবসময় আফসোস করতে হয় না; কারণ যে বাসটি মিস হলো সেটি হয়তোবা সঠিক সময়ে পৌঁছতে বা ভালো সেবাও দিতে পারে। কিংবা বিপরীতে দূর্ঘটনায়ও পতিত হতে পারে। বা পরের বাসটিও অনুরূপ হতে পারে। তাই মিস হওয়া বাসটি ভালো নাকি পরের বাসটি ভালো তা আমরা আগে থেকে কেউ জানিনা। জীবনের প্রাপ্তিগুলো বা সুযোগগুলো বা বঞ্চনাগুলো এমনই। কোন প্রাপ্তি বঞ্চনার দূত হয়ে আসে আর কোন বঞ্চনা প্রাপ্তির দূত হয়ে আসে- তা আমরা কেউ বুঝি না। সবই ওপরওয়ালার লীলা।
যাই হোক, পরের বাসে সবাই মিলে পৌঁছে গেলাম রোমা স্ট্রিট পার্কে। নাম শুনে মনে হতে পারে যে কোন শহরের ছোট পার্কের মতোই এটি একটি সাধারণ পার্ক মাত্র। বিষয়টি ওরকম নয়। এ পার্কটি ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, বৃক্ষ-ফুল-লেক- এর সম্মিলনে খেলাধুলার সরঞ্জামসহ নানারকম ইনফ্রাস্ট্রাকচারসমূহের বিবেচনায় অন্যান্য পার্কের চেয়ে ভিন্ন। ব্রিসবেনের ব্যবসা বাণিজ্য, সংস্কৃতি, বিনোদন, শিক্ষা ও উন্নয়নের ইতিহাস এ পার্কের মাটির সাথে সম্পৃক্ত।
স্থানীয় আদিবাসীরা হাজার বছর ধরে এ স্থানটিকে ব্যবহার করতো তাঁদের সভা ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানস্থল হিসেবে।আদিবাসীরা বিভিন্ন দলে ও উপদলে বিভিন্ন এলাকায় বাস করতো। ডিউক অব ইয়র্ক নামক ক্ল্যানটি প্রভাবশালী ছিলো।এরা বিভিন্ন সময় যে কোন মিটিং ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এখানে করতো। ১৮৭৫ সালে এলাকাটি প্রথম সেটেলমেন্টের অধীনে আসে এবং ১৮৭৫ সালে এখানে টারমিনাল স্টেশন স্থাপিত হয়। এ রেলওয়ে টারমিনালটি গুরুত্বপূর্ণ মালামাল পরিবহনে ১৯১১-১৯৩৪ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। ১৯২০ সালে ৫,৫৫,০০০ ঘনমিটার মাটি খনন করে এ টারমিনালের কাজ শুরু হয়। ডিউক অব ইয়র্ক নামক ক্ল্যানটি প্রভাবশালী হলেও আরও অনেক ক্ল্যান এখানে ছিল। এর একটি ছিল বান্ডজুলাং জাতি। এদের সাথে অস্ট্রেলিয়ার মাইথলজির ‘তিন ভাই‘ কাহিনীটি জড়িত। কাহিনীটি এরকম-
তিন ভাইয়ের নাম ছিল মামনহ, ইয়ারবিরি, এবং বিরাং। তিনভাই একবার তাঁদের মা ও বউকে নিয়ে নৌকা দিয়ে রওয়ানা দিল। পথে নৌকায় সমস্যা হওয়াতে গুমিংগার নামক এক জায়গায় নোঙর ফেলে নামলো। তিনভাই যখন নৌকা মেরামত করছিল, তাঁদের মা গেলো কিছু খাবারের খোঁজে বনের ভেতরে। জোয়ার-ভাটার বিবেচনায় যখন নৌকা ছাড়ার সময় হলো তখনও তাদের মা ফেরেনি। মাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে তিনভাই মাকে ফেলে দিয়েই নৌকাভ্রমণ পুনরায় শুরু করে। কিছুক্ষণ পর মা ফিরে এসে দেখে যথাস্থানে নৌকা নেই। তিনি কষ্ট পেলেন, রাগ করলেন ও অভিশাপ দিলেন। মায়ের অভিশাপে সমূদ্রের তলদেশ ফাটল ধরলো, প্রচন্ড বড় এক ঢেউ তৈরি হলো, তিনভাইয়ের নৌকা ডুবে গেল।যেভাবেই হোক তিনভাই সাঁতার কাটতে কাটতে আধমরা অবস্থায় সমূদ্রের তীরে এসে পৌঁছলো। এবং পরে মাকে তারা খুঁজে পাওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়াতে বসতি স্থাপন করা শুরু করলো। এক ভাই গেলো দক্ষিণে, আরেক ভাই পশ্চিমে আর অন্য ভাই গেলো উত্তরে। তিনভাইয়ের এ ক্ল্যানটির নাম হলো বান্ডজুলাং জাতি।
রোমা স্ট্রিট পার্কেও একটি বড় পাথর রয়েছে, যে পাথরটি ওই তিনভাইয়ের কোন এক ভাই এনে রেখেছিলেন বলে কথিত আছে।তথা বড় পাথরটি ‘তিন ভাই‘ শীর্ষক মাইথলজির সাথে সম্পর্কিত। ইতিহাস ছাড়াও পার্কটির ব্যাতিক্রমধর্মী চরিত্র সহজেই চোখে পড়ে। সুন্দর ভূ-আকৃতি, উজ্জল আলো, পানির ঝর্ণা, ফুলেল রঙ্গিণ ও স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশ যে কারো মন ভুলিয়ে দেয়। বাহারী পুষ্পবৃক্ষরাজি, জ্যামিতিক বনায়নের সারিবদ্ধ রূপ, নিঁখুত স্থাপত্য, প্রসারিত সবুজ লন ইত্যাদিতে একাকার হতে হলে এর চেয়ে আর ভালো পরিবেশ আর কী হতে পারে। সবুজ লনে শোয়া, মাটির গন্ধ নেওয়া, সাঁতারের আহবানে বা ঝর্ণায় ভেসে যাওয়ার আকুলতায় বিহবল হওয়ার সব সুযোগ রয়েছে সেথায়। বাচ্চাদের জন্য খেলাধুলা, জিমন্যাসটিকসহ কী নেই সেখানে!পার্কের ডিজাইন ও সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণ নজর কাড়ার মতো। লেক, বিল্ডিং, ক্যানেল, স্টেয়ার, ঝর্ণা সবই ইতিহাস ও্ ঐতিহ্যের সাথে সাদৃশ্য রেখে টেকসইভাবে করা হয়েছে। রুচিশীল মানুষগুলো প্রকৃতিকে যেন দাস বানিয়ে রেখেছে। একেবারে ছবির মতো করেই সাজিয়ে রাখে। আদিবাসীদের অনেকেই সেটেলারদের দাস হিসেবে খেটেছে। এ দাস নিয়েও একটি জোক্স বলেছিল এ পার্কে বসেই আমার জার্মান এক বন্ধু।
এক ধনী লোক একজন দাস কিনলো। কিছুদিন পরেই দাসটি মারা গেলো। সুতরাং ধনী লোকটি দাসটিকে আগের মালিকের কাছে ফেরত নিয়ে গেল এবং বললো ‘তুমি যে দাসটি আমার কাছে বিক্রি করেছিলে সে তো মারা গেছে‘। আগের মালিক অবাক হয়ে আফসোস করে বললো ‘ হায় হায় বলেন কী! সে তো আগে এরকম কখনো করেনি!‘
যাই হোক বলছিলাম পার্কটির সৌন্দর্যের কথা।ঝোঁপ জঙ্গলে ভরা পার্কটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক আবার আধুনিকতার ছোঁয়া। জঙ্গলের আকর্ষণ নানা সময়ে নানা রকম। আবার বিভিন্ন স্থানেও বিভিন্ন রকম। ফার্ণগুচ্ছের পরেই জলা জায়গায় পদ্মবন। হাজারো প্রজাতির পদ্ম আর শাপলা এখানে। অনেকটুকু জায়গা নিয়ে সাজানো হয়েছে মৌসুমী ফুলের বাগান। প্রজাপতি রঙের বর্ণিল ফুল দেখলে আশ্চর্য হতে হয়। রঙের এমন আশ্চর্য কম্বিনেশান হয় কীভাবে! জানা গেলো এখানে অনেক ফুলের রঙ কম্পিউটারে তৈরি করা হয়েছে প্রথমে। পরে সে অনুযায়ী জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফসল এই বর্ণিল ফুল।ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট বজায় রেখে এরকম সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষনের বিষয়টি বাংলাদেশের যে কোন সিটি কাউন্সিলের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে।
২.
আরেকদিনের কথা বলি। যদিও আমি গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটিতে পড়ি, হঠাত করে কিউইউটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এর এক ভাই বললো ওরা সানশাইন কোস্টে পিকনিকে যাবে। আমাকেও অংশ নিতে আহ্বান করে। কী না কী ভেবে আমি রাজি হয়ে যাই। সান শাইন কোস্টের গল্প আগে শুনেছি।
প্রশান্ত মহাসগারের তীরঘেষে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড প্রদেশের উত্তর পূর্বে একটি প্রাকৃতিক পর্যটন শহর অবস্থিত। নাম তার সানশাইন কোস্ট।ক্যালন্দ্রা সম্প্রাদায়রা সেখানে বাস করতো। প্রথম সেটেলার হিসেবে ১৭৭০ সালে ক্যাপে্টইন কুক প্রথম পা রেখে যাত্রা শুরু করেন। এরপর বিশ্বরাজনীতি বা অর্থনীতির কল্যাণ ও বাণিজ্যের খেলায় এ তীরও বাদ পড়েনি।কাঠ পাচার, বন পাচার, মৎস্য শিকার, মানব স্থানান্তর কোনকিছুই রহিত থাকেনি।
প্রকৃতিই তার মূল সৌন্দর্য। ১৯৮০ সালের পর মূলত পর্যটন, সার্ফিং, ও হলিডে উদযাপনকে কেন্দ্র করে সানশাইন কোস্টের রাস্তাঘাট ও অন্যান্য অবকাঠামো দ্রুত উন্নতি লাভ করে।গত সপ্তাহে ওখানে ভ্রমণে গিয়ে অনেক বিষয় চোখে পড়লো।
কিউইউটি, কুন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি, সিকিউইউ, গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটিসহ ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ জন পিকনিকের উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা হলাম। বাস আমাদেরকে বিচের পাশে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। দূরে কোথাও যেখানে ট্রাফিক সমস্যা নেই। আবার বিকেলে নির্দিষ্ট সময়ে বাস আসলো, আমরাও ফিরলাম। উক্ত বাস বা বাসের ড্রাইভার যাত্রী বা পথচারি কারো কোন সমস্যা তৈরি করলোনা।
কীংস বিচে গেলাম। হাজার হাজার পর্যটক সী বিচে সাঁতার কাটছে, সার্ফিং করছে, লাফালাফি করছে, বিভিন্ন খেলা খেলছে, সান বাথ নিচ্ছে কোন আওয়াজ নেই। মাছের বাজার টাইপ চিৎকার চেচামেচি নাই। স্বল্পবসনা নারী-পুরুষ যে যার মতো সমুদ্রস্নানে ব্যস্ত। কেউ কারো দিকে তাকানোর সময়ও নেই।তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আমাদের মতো ঝগড়াও নেই।
পাশেই সুইমিং পুল। স্বচ্ছ পানিতে ছেলেপুলেসহ ফ্যামিলির সবাই সাঁতার কাটেছে। খুব মজার। কেউ কোথাও কাউকে বিরক্ত করছেনা। বা বিরক্ত হচ্ছেনা। পাশের ড্রেস চেঞ্জিং কক্ষে বা টয়লেটে হাজার লোক যাচ্ছে। টয়লেটে কোন অযাচিত ময়লা বা নোংরা পরিবেশ তৈরি করছেনা।
কৃত্রিম ঝরণায় গোসলও খুব ফান! বাচ্চাদের জন্য ছোট খাটো রাইড, বয়স্কদের জন্য শরীরচর্চার সরঞ্জাম। কী নেই? একটু দূরে দূরেই সমূদ্রে নামার জন্য সারিবদ্ধ সিড়ি। এবং গোসলের জন্য ঝরণাকল পয়েন্ট ও ড্রেস পরিবর্তনের জায়গা। না দেখলে বিশ্বাসই হয়না প্রকৃতির সাথে আধুনিক সরঞ্জামাদির কী সুন্দর সংযোগ ও সমন্বয়। মিলেমিশে একাকার। পর্যটকরা যত প্রয়োজন অনুভব করতে পারে সব আছে ওখানে। আমাদের ট্রলি ব্যাগ এক জায়গায় রেখে কত জায়গায় গেলাম। কোন চোর এসে সেটা নিয়ে যায়নি। আহা এমন যদি হতো!
অবাক লাগার মতো একটি বিষয় হচ্ছে, সী বিচে রোদে তপ্ত বালুর মধ্যে শুয়ে শুয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পর্যটক বই পড়ছে একমনে। একজনকে দেখলাম ২ টা বই শেষ করলো একটানা। আমরা তো সী বিচে গেলে ছবি আর সেলফি তুলেই হুশ পাইনা। বই পড়াও ওদের ধ্যান-জ্ঞান। যারা বই পড়ে না তারাও বিভিন্ন খেলা যেমন ফুটবল, বলিবল, সার্ফিং ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের মতো সেলফি নিয়ে ব্যস্ত নয়।
বিচের পাশে পার্কে আমরা আমাদের মধ্যাহ্ন ভোজন শেষ করলাম। কিছু মজার খেলধুলা ও র্যাফেল ড্র হলো। মজার বিষয় কোথাও কেউ কোন ময়লা ফেলেনি। অথচ এ আমরাই দেশে গেলে বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র ময়লা ফেলি!
বিচের সব দেখে আমার কেবলি হলো মনে প্রাকৃতিকভাবে আমাদের কক্সবাজার অনেক সুন্দর। এর ধারে কাছে অন্য বিচ আসবেনা। অন্তত আমার চোখে তাই মনে হয়েছে। তবে অন্যান্য সুবিধা, অবকাঠামো, মানুষের ব্যবহার, আচরণ, গতিবিধি, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিবেচনায় আমাদের যেতে হবে অনেক দূর।
ছেলে আমার প্রশ্ন করে, বাবা আমার লজ্জা লাগে ওরা এত ছোট কাপড় পড়ে কেন? আমি বলি ওতে তোমার সমস্যা কি? ছেলে বলে আমি তাকাতে পারিনা, শরীর দেখা যায়। আমি বলি তাকাবানা। থেমে বলি , অথবা তাকালেও সমস্যা নাই। পরে আমি ছেলেকে ডেকে কাছে আনি ওর হাত ধরে চিমটি দিই। কেমন লাগে? ও বলে, সামান্য ব্যথা। আবার তার পেটে চিমটি কাটি। কেমন লাগে? প্রশ্ন করি। ছেলে উত্তর দেয় সামান্য ব্যাথা। প্রশ্ন করলাম হাত আর পেটে ব্যথা কী একই রকম? বলল হুম। তার মানে দুটোই চামড়া। শরীরের পুরো অংশই চামড়ামাত্র। ওটা খোলা কী ঢাকা বিষয়না। সবই সমান। এ নিয়ে লজ্জারও কিছু নাই। আবার অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকারও কিছু নাই। নির্লিপ্ত থাকতে শেখো। ছেলে চিন্তা করার ভান করে। মনে হয় কিছুটা বুঝতে পারছে। আমি আবারও বলি আমাদের সংস্কৃতিতে আমরা শরীর ঢেকে রাখা পছন্দ করি। তুমি কি পছন্দ কর? সে বলে শরীর ঢেকে রাখা। আমি বলি গুড। তবে মনে রাখতে হবে। অন্য সংস্কৃতিতে এসছো। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা সংস্কৃতি ও দৃষি্টভঙ্গীর প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। অস্বস্তি লাগলেও সেটা প্রকাশ করা যাবেনা। বা দেখারও দরকার নাই। ওকে? ছেলে স্মিত হাসে। আধাআধি কিছু একটা যা বুঝেছে তাই বোঝাতে চেষ্টা করছে হাসিতে। কী সুন্দর হাসিটা!
ফেরার পথে ভাবি, হবে। একদিন আমাদের দেশেও এরকম সুবিধাসম্পন্ন সী বিচ বা পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে। আমরাই করবো। স্বপ্ন দেখতে পারলে বাস্তবেও সম্ভব। অপরাধীদের নির্বাসনস্থল অস্ট্রেলিয়া যদি ২৫০ বছরে পরিবর্তন হতে পারে, আমরা কেন নয়?
-সফিকুল ইসলাম, ব্রিসবেন অস্ট্রেলিয়া, ২০১৮
-ড. সফিকুল ইসলাম।
(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )