মোহাম্মদ ওয়ালিউর রহমানের উপন্যাস ‘‘তুমি রবে নীরবে‘‘
পাঠপ্রতিক্রিয়া: ড. সফিকুল ইসলাম।
ওয়ালিউর ভাইকে পারসনালি চিনি না। আমার এলাকার বাদৈর ইউনিয়নের বর্নী গ্রামে বাড়ি ও আমার স্কুলের সিনিয়র এলামনাই হলেও আগে থেকে পরিচিত ছিল না। ফেসবুকে পরিচয়। কোনোদিন দেখা হয় নি, দেখা হবে না হয়তো কোনোদিন। তাঁকে ভালো লাগে তাঁর লেখার ধরণ আর বিষয় দেখে। কানাডাতে বসবাস ও ব্যবসায় ব্যস্ত জীবন পার করলেও তাঁর লেখাতে মূল উপজীব্য বাংলার জীবন। গ্রামীণ স্মৃতিগুলো তিনি এত সুন্দর করে লিখেন যে পাঠক নিজ চোখে সব দেখতে পায় চোখের সামনে। স্বপরিবারে কানাডায় থাকলেও তাঁর লেখায় যেমন কানাডার জীবনযাত্রার বৃত্তান্ত উঠে আসে অনর্গল, তেমনি বাংলাদেশের চালচিত্র হরহামেশা লিখেন অনায়াসে। সেকারণেই ওয়ালিউর ভাইকে ভালো লাগা। নিয়মিত অনুসরণ করি, ব্যস্ত থাকলেও ওনার লেখা মন দিয়ে পড়ি। ভাইয়ের একটি পান্ডুলিপি উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয়েছে শুনে আমি বইমেলায় ঢুকেই নিজে সংগ্রহ করি গত পরশু। আজ সকালে কুমিল্লা রওয়ানা হয়ে গাড়িতে বসে বইটি পড়ে ফেলি। আর সরকারি দায়িত্ব পালনশেষে ফেরার সময় গাড়িতে বসেই ল্যাপটপে বইটি নিয়ে লিখতে বসলাম।
তুমি রবে নীরবে মোহাম্মাদ ওয়ালির রহমানের প্রথম উপন্যাস। আকারে খুবই ছোট। পাঠকদের কাছে শেষ হয়েও হইলো না শেষ আমেজ আফসোস তৈরি হবে বইটির পড়ার পরে। বইটি সুখপাঠ্য, একবসায় পড়া যায় এমন বই। গল্পে ঢুকে গেলে কোনো পাঠক বইটি ছেড়ে উঠতে পারবে না। এখানেই লেখকের স্বার্থকতা। সহজ বাক্যে, সাবলীল টোনে, সকল কথামালা সাজিয়েছেন আর গল্পের ভেতরে গল্পে গেঁথেছেন। কী আছে এ বইয়ে?
মূলত দেলু আর তুলির প্রেমকাহিনী। প্রেম না বলে প্রেম শুরু হওয়া বা শুরু হওয়ার আগে যেসব অলঙ্কার ঘটে তাই তিনি তুলে ধরেছেন নিপূন হাতে। আশি নব্বই দশকে এখনকার মতো খোলামেলা ধরাধরি, ছোঁয়াছুয়ি বা মেলামেশা ছিল না। এক পলক দেখা, একসাথে রিকশা উঠতে পারা, সামান্য হাতের ছোঁয়া লাগা যে শরীর ও মনে কত ঝড় বইয়ে দিত সেসব এখনকার কিশোর যুবকরা বুঝবে না। আমাদের আশি নব্বই দশকের প্রেমের ছোট ছোট অনুষঙ্গগুলোকে তিনি উপন্যাসের আদলে এঁকেছেন দারুণ করে। মধ্যবিত্ত পরিবারের অন্যান্য টানাপোড়েন, সম্পর্কের মিথস্ক্রিয়া, ভাইবোন বা বন্ধুদের খুনসুটি বা লাগালাগি ইত্যাদিও উঠে এসেছে এ উপন্যাসের ভেতরে ভেতরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে বন্ধুত্ব ও প্রেমগুলো কেমন স্বর্গীয় হয় আর পকেট খালি থাকা যুবকরা কেমন করে প্রেমজীবন পার করে তাও বোঝা যায় এ উপন্যাসে। সিগারেট খাওয়ার নানান প্রসঙ্গ, উপলক্ষ্য ও লুকুচুরিও চিত্রিত হয়েছে এ বইয়ে।
মোদ্দাকথা, লেখক যে কোনো ঘটনা যেমন সংক্ষেপে বলতে পারেন তেমনি ঘটনা বা পরিবেশ বা পরিস্থিতির ডিটেইল বর্ণনা করতে পারেন। পাঠকরা খুব সহজেই আশি নব্বই দশকের বাস্তবে চলে যাবে কল্পনায়।
কেউ কেউ হয়তো এটাকে বড় গল্প বলবে । কিন্তু আমি এটাকে হুমায়ুন আহমেদ টোনের উপন্যাসই বলবো। বইটি শেষ হলেও বইয়ের গল্পটি যেন শেষ হলো না। মনে হবে এর পরে কী হলো? দেলু আর তুলির সম্পর্কের শেষ কী হলো বা দেলুর বোন আফরিনের বিয়ে হয়েছিল কিনা? হলে কী পরিণতি হয়েছিল তা জানা গেলো না। লেখক কী তবে পরের বইয়ে বিস্তারিত আনবেন? নাকি বাস্তবেও দেলু-তুলির সম্পর্ক ওখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল তা কেবল লেখকই জানেন।
পাঠকরা বইটি পড়তে পারেন। ভালো লাগবে গ্যারান্টি দিচ্ছি। উপভোগ্য ও সুখপাঠ্য এ বইটির জন্য শুভকামনা।
……..
পরিবর্তন প্রকাশনী, প্রকাশক সীমান্ত বাধন চৌধুরী, প্রচ্ছদ চারু পিন্টু, মূল্য- ২০০ টাকা। পাওয়া যাবে স্টল দোয়েল, লিটল ম্যাগ চত্ত্বর।
-ড. সফিকুল ইসলাম।
(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )