সম্পর্ক
মানুষ এক নেশা থেকে আরেক নেশাতে যায়। নেশা ছাড়া মানুষ থাকতে পারে না। আসক্তি প্রত্যেক মানুষের অমোঘ নিয়তি। কেউ মাদকে, কেউ কাজে, কেউ খেলায়, কেউ ধর্মে। কবির শব্দখেলা যেমন এক নেশা, বাগ্মীর কথামালাও আরেক নেশা। নেশা থেকে কেউ বের হতে পারে না। এক নেশা থেকে বের হলে সে অন্য নেশায় মজে। মানুষ কিছু একটা নিয়ে থাকতে চায়। হয় দু:খ ভূলতে না হয় দু:খ পেতে। মানুষের মতো এমন আত্মঘাতি ধ্বংসাত্মক খেলুড়ে প্রাণী আর দ্বিতীয়টি হয় না। তাহলে নেশা কি? একজন মানুষ যেটি ছাড়া থাকতে পারে না, সেটাই তার নেশা। লাঠিম যে ঘুরে এটা কি তার নেশা? ফুটবল যে লাথি খায় সেটা তার নেশা? সুন্দরী যে হাসে-সেটা কি তার নেশা? আমরা যা নিয়ে আবর্তে থাকি -তাই নেশা। এভাবে ভাবলে জগতে কে নেশায় আসক্ত নয়?
মানুষ কেন নেশায় যায়? কারণ তারে আটকানোর কেউ নেই। যদি আটকানোর কেউ বা কিছু থাকতো তবে সে সেই নেশায় যেতো না। কিন্তু যে বা যা তারে আটকায়, সে বা সেটাই তার নেশায় পরিণত হয়। তার মানে নেশা থেকে মানুষের মুক্তি নেই। উজবুকদের কেউ কেউ বলবে যে, ‘‘নেশা দুইরকম- ভালো নেশা ও খারাপ নেশা।‘‘ এই যে ভালো ও মন্দ নামে ভাগ করার নেশা, এই নেশাও কম নেশা না। বিভাজনের নেশা মানুষের আদিম নেশা। এই নেশায় কত জাতি কতভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে- কেই বা তার পরিসংখ্যান রাখে!
…………
মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই মু্ক্ত প্রাণী, স্বভাবগতভাবেও। তারে আটকাতে গেলে সে মুক্ত হবার জন্য আরও পাগল হয়ে ওঠে। তারে তখন নেশায় পেয়ে বসে। তাই মানুষকে জোর করে আটকানো যায় না; কনসালটেন্সি করেও থামানো যায় না। মানুষ তার স্বভাব নামক নেশা থেকে বের হয় না। হয়তো সাময়িত বিরতি বা ইস্তফা নেয়। মানুষ একটি অভ্যাস থেকে তখনি বের হয়, যখন সে আরেকটি অভ্যাসের দাসে পরিণত হয়। সুতরাং জোর করে কাউরে আটকাতে যেও না। আটকাতে গেলে সে খাঁচায় থেকে মুক্ত হয়ে যাবে, তুমি তা টেরও পাবে না। নজরুলকে ইংরেজরা কারাগারে বন্দী করে, তার বিদ্রোহী মনকে আরও বিদ্রোহী করে মুক্ত করে দিয়েছে। যে কারণে কারাগারে বসেই সে অবাধ্য মুক্ত স্বাধীনের মতো বলতে পেরেছে।
প্রেমিকারে জোর করে ঘরে আটকে রাখলে সে তখন ঘরে বসেই মুক্ত জীবনে বাস করে, যে জীবনে প্রেমিকের কোনো স্থান থাকে না। মানুষ যেন ঘুড়ির মতোই। বেঁধে রাখলেই সে দূরে গিয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে। কাছে আসবে না বলে ‘না‘ ‘না‘ করে মাথা নেড়ে। বাঁধন ছিড়ে দিলেই বরং সে টুপ করে মাটিতে নেমে আসে। সুতরাং যদি কাউকে কাছে পেতে চাও, তাকে ছেড়ে দাও। ছেড়ে দাও তবে সরে যেওনা। কাছে থাকো, পাশে থাকো অনুভবে থাকো। সে যেন দূরে যেতে না যেতেই তোমাকে অনুভব করে এবং তোমার টানে বারে বারে ফিরে আসে -সেরকম পরিবেশ দাও।
-ড. সফিকুল ইসলাম।
(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )