মানুষ: নিরপেক্ষতা বনাম ন্যয়পরায়নতা
১। ঘটনা- ১
ক গ্রুপ ও খ গ্রুপ এর মধ্যে দ্বন্দ। বাস্তব ঘটনাতে প্রকৃতই ক এ এর দোষ। এখন আপনি যদি সত্যতার ভিত্তিতে ন্যায়বিচার করতে চান, তবে রায় খ এর পক্ষে যাবে। ক গ্রুপ ভাবতে পারে যে আপনি খ এর পক্ষের লোক।
২। ঘটনা-২
ক গ্রুপ ও খ গ্রুপ এর মধ্যে দ্বন্দ। বাস্তব ঘটনাতে প্রকৃতই খ এ এর দোষ। এখন আপনি যদি সত্যতার ভিত্তিতে ন্যায়বিচার করতে চান, তবে রায় ক এর পক্ষে যাবে। খ গ্রুপ ভাবতে পারে যে আপনি ক এর পক্ষের লোক।
যদিও ঘটনা দুটোতে আপনি কারো পক্ষেই ছিলেন না, কেবল ন্যায়ের পক্ষেই ছিলেন। তবুও দুপক্ষের লোক আপনাকে অন্য পক্ষের লোক ভাববে। যদিও একবার তাঁদের পক্ষে গিয়েছে তারা সেটি ভুলে যাবে। কারণ প্রথমত তারা জানে যে যেটি তাদের পক্ষে ছিলো সেটিতে তাদের কোনো দোষ ছিল না। দ্বিতীয়ত মানুষ ইতিবাচক বিষয় মনে রাখে না। যা বিপক্ষে যায়, ক্ষতির কারণ হয়, তাই মনে রাখে।
এসব ক্ষেত্রে উভয় গ্রুপের মূল নেতৃত্ব আপনার নিরপেক্ষতা মনে মনে বুঝতে পারবে। কিন্তু চামচারা বুঝতে চাইবে না। কেবলি আপনাকে অন্য পক্ষের ভাববে। আর চামচারা যখন ঘরে বাইরে আপনার সমালোচনা করবে, নেতৃত্ব চুপ থাকবে। আর দাড়ি চুলকিয়ে মিচকি হাসবে।
যাই হোক, ন্যায়ের পক্ষে থাকুন। নিরপেক্ষ হিসেবে আপনাকে কেউ সবসময় ভাববে না, ভাবলেও বলবে না। লোকেরা সুবিধামতো সব ভাবে। ন্যায়ের পক্ষে থাকা মানে কারো পক্ষেই। তাই যার পক্ষেই যাক, ন্যায়ের পক্ষে থাকুন।
………………
সমাজের বেশিরভাগ লোক হাইপার বা পাগল। যদিও আমরা এদেরকে সাধারণভাবে স্বাভাবিক দেখি। এই হাইপার লোকেরা সামান্য একটু ব্যতিক্রমী আচরণের, অতিমেধার ও ভিন্ন জীবনযাত্রার লোকদেরকে পাগল বলে ডাকে। স্বাভাবিক সাধারণেরা ব্যাতিক্রমীদের বুঝতে পারে না। নিজেরা যেমন ঘুম-খাওয়া-বাড়ি-গাড়ি নিয়ে ব্যস্ত, অন্যদেরও তেমন আশা করে। এর বাইরের ব্যতিক্রমী জীবনযাত্রা দেখলেই ভাবে পাগল। আসলে স্বাভাবিক সাধারণদেরই অধিকাংশই মানসিক টানাপোড়েনে জীবন পার করে। বাউল, বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবি, ফকির ইত্যাকার জীবনযাত্রা মানেই সাধারণের চোখে পাগলামি।
পাগলেরাই অন্যকে পাগল ডাকে। কোনো লোক সুস্থ লোক অন্যকে পাগল ডাকে না।
…………………
কেউ যদি মন খুলে কথা বলে, সব প্রকাশ করে, সরলভাবে সব বলে দেয় তখন অন্যরা ভাবে মনে হয়ে শুয়ে গেলো। ধীরে ধীরে তারে অবজ্ঞা করতে শুরু করে। যা সহজলভ্য তাতে মানুষের আগ্রহ বরাবরই কম।
আবার যদি কেউ সব না বলে, মন খুলে শেয়ার না করে, সব প্রকাশ না করে, একটু ধরে রাখে তখন অন্যপক্ষ তারে ভাব মারা লোক, গম্ভীর লোক, জটিল লোক বলে মনে করে। ধীরে ধীরে সমীহ করতে থাকে, গুরুত্ব দিতে থাকে। যা দূর্লভ তাতে মানুষের আকর্ষণ বেশি।
তবে দীর্ঘমেয়াদে সরলদেরই মানুষ ভালোবাসে, ভালো জানে, সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে, আপন ভাবে। সময় থাকতে বুঝে না, পরে বুঝে। থাকতে কাঁচি হারাইলে দা অবস্থা।
……………..
মানুষের কাছ থেকে শুনে অন্য মানুষ সম্পর্কে ধারণা নিন। তবে মানুষের কাছে শুনে শুনে কারো সর্ম্পকে পুরোপুরি উপসংহার টানবেন না। নিজে মিশুন, কথা বা কাজের লেনদেন করুন, তারপর উপসংহারে পৌঁছুন। অন্যথায় পুরোপুরি ভুলের মধ্যে বাস করবেন বা একজন ভালোমানুষকে খারাপ ভেবে যাবেন কিংবা মন্দ মানুষকে ভালো ভেবে যাবেন।
উদাহরণ স্বরূপ, একটি পরিবারে এক ভাইয়ের বউ আছে। নতুন আরেক ভাই বিয়ে করলেন। তখন নতুন বউ আসার সাথে সাথে তাকে পরিবারের কিছু লোক আগের বউয়ের বিষয়ে মন্দ ধারণা দিয়ে দেয়। তখন নতুন বউ আগের বউকে সেভাবে ট্রিট করা শুরু করে। নতুন বউ আগের বউকে মন্দ বলেই ভাবে, কল্পনা করে, আগের বউ যতই ভালো করুক নতুন বউ কেবল মন্দ দিকটি খুঁজে পায়। দীর্ঘ বছর না কাটলে ,অনেক কথা বিনিময় না হলে আর অনেক লেনদেন না হলে নতুন বউ বুঝে উঠতে পারেনা। নতুন বউয়ের সময় লাগে আসল ঘটনা বুঝতে।
তেমনি অফিসে নতুন কলিগ এলে, স্কুলে নতুন শিক্ষক এলে, ক্লাসে নতুন ছাত্র এলে, পুরাতন কিছু লোক যদি কারো সম্পর্কে নতুনকে ভুল ব্রিফ করে তবে নতুনজন একটা ভুলের মধ্যে দিয়ে যায় দীর্ঘদিন। অনেক সমস্যা হয়।
তাই মানুষের কাছে শুনে শুনে কারো সর্ম্পকে পুরোপুরি উপসংহার টানবেন না। নিজে মিশুন, কথা বা কাজের লেনদেন করুন, তারপর উপসংহারে পৌঁছুন। অন্যথায় পুরোপুরি ভুলের মধ্যে বাস করবেন বা একজন ভালোমানুষকে খারাপ ভেবে যাবেন কিংবা মন্দ মানুষকে ভালো ভেবে যাবেন।