প্রজ্ঞাবান ও সচেতনের প্রকাশ
একেবারে ইনফরমাল রিলেশন বা নিকটজন না হলে কারো সাথে কথা বলার সময় একজন মানুষের কথার ভাষা, শব্দচয়ন, বলার ধরণ, কথার ঝাঁঝ, কন্ঠের উঠানামা, সেন্স অব প্রোপোরশান বা মাত্রাজ্ঞান, কমনসেন্স, স্থান-কাল-পাত্রবোধ দেখলে বোঝা যায় তিনি কতটা কালচার্ড বা সিভিলাইজ্ড বা স্বশিক্ষিত।
……………………
নিজের মত, নিজের পথ, নিজের ধর্ম, নিজের ধারণা, নিজের রাজনৈতিক মতবাদ প্রকাশের সময় যা সত্য ও সুন্দর তাই প্রকাশ করা উচিত।
যে ধর্মেরই হইনা কেন, যে মতেরই হইনা, যে পথেরই হইনা কেন, যে পরিবারেরই হইনা কেন, যে সমাজেরই হইনা কেন, যে দেশেরই হইনা, যে জাতেরই হইনা কেন, যে রাজনৈতিক ধারণাই পোষণ করিনা কেন।
উগ্রভাবে, দৃষ্টিকটুভাবে, নির্লজ্জভাবে অসত্য ও অসুন্দর প্রকাশ, প্রচার ও প্রসার নিন্দনীয় ও বর্জনীয়।
ক্ষীণ যুক্তিতে গলার জোরে ও গায়ের জোরে অসত্য ও অসুন্দরকে চাপিয়ে দেবার চেষ্টা গর্হিত কাজ।
সন্তানের দোষ বলে না বেড়াতে পারি, কিন্তু সন্তানের দোষকে গোপন রেখে শোধরাণোর চেষ্টা করতে পারি। অন্তত দোষকে গুণ বলে দাবি না করি, প্রচার না চালাই।
তেমনি নিজের মত, পথ, ধর্ম, ধারণা, মতবাদ সবক্ষেত্রে তাই করা উচিত।
কেউ যদি কাকের মতো ‘চোখ বুঝে চাল লুকোনোর অভিনয় করে‘, কিংবা ট্রাম্পের মতো চোখ খুলে রেখেই বলে ‘বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন নেই, শাদা রেসিস্ট নেই‘ তবে তাঁদের তরে নিন্দা করার ক্ষমতা হয়তো সাধারণের নেই।
কিন্তু মনে মনে ঘৃণা করার ক্ষমতা সাধারণরা ঠিকই রাখে। সব দমন করা যায়, মন বা কল্পনাকে নয়। সাধারণরা কিছু বলতে গেলে লালসালু উপন্যাসের আব্দুল মজিদের মতো ‘তোমার দাড়ি কই মিয়া‘ বলে অপ্রাসঙ্গিক দোষ ধরে হামলে পড়ে।
কেউ যদি চাঁদে জনৈক মাওলানাকে দেখার কথা সত্য বলে প্রচার করে আর কেউ যদি গরু রচনায় ক্যান্সার রোগ সারায় সত্য বলে প্রচার করে তবে তাঁদের কিছু বলতে না পারলে এড়িয়ে গিয়ে মনে মনে অপছন্দ করাই ভালো।
কাক আর ট্রাম্পের উদাহরণ দিলাম আর সাম্প্রতিক দুটো ধর্মীয় উদাহরণ দিলাম। এরকম উদাহরণ বিভিন্ন মতের, বিভিন্ন পথের, বিভিন্ন ধারণার, বিভিন্ন রাজনৈতিক ধারণার, বিভিন্ন দলের, বিভিন্ন সমাজের, বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন ব্যাক্তির, বিভিন্ন পরিবারের অনেক পাবেন। আপনি চোখ বন্ধ করলে দেখবেন। ফেসবুক খুললেও দেখবেন। অসত্য ও অসুন্দরকে জোর গলায় প্রকাশ ও প্রচার করে তারা।
কী আর করা! নিজের কান ও চোখকে অবিশ্বাস করে শুনতে হবে দেখতে হবে। কিছু বলার গেলে বলবে লোকে। না বলা গেলে ঢুক গিলে গিলে অপছন্দ করবে। মনে মনে, মনে প্রাণে।
তবে যদি সত্যিই নিজের মত ও পথকে সেরা ভাবি তবে সেটার প্রকাশও হওয়া উচিত নান্দনিক, সর্বজনগ্রহণযোগ্য, উত্তম, রুচিশীল ও পরিশীলিত।
তবে চলুন চেষ্টা করি। নিজের মত, নিজের পথ, নিজের ধর্ম, নিজের ধারণা, নিজের রাজনৈতিক মতবাদ প্রকাশের সময় যেন যা সত্য ও সুন্দর তাই প্রকাশ করি। কেউ যেন দূর থেকে হেসে না উঠে, কেউ যেন ঘুণাক্ষরেও আঘাত না পায়, কেউ যেন মনে মনে ঘৃণা না করে।
-ড. সফিকুল ইসলাম।
(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )