উপহারের আপেক্ষিকতা
১। কাউকে যখন আপনি সময় দেন তখন তাকে আপনি অর্থই দেন। মানে ওই সময়ে আপনি অন্য কাজ করলে যে পরিমান অর্থ পেতেন সে পরিমান অর্থ বা পন্য বা বস্তুর সমান তাকে দেন। কারো সময়ের অর্থমূল্য অনেক বেশি, কারো কম। যোগ্যতা ও বিক্রয়কৌশলের উপর নির্ভর করে। কিছু লোক অঢেল সময় অন্যকে দেয়, প্রিয়জনকে দেয়। প্রিয়জনদের অনেকে সেটা বুঝতে পারেনা বা যা পেয়েছে তার মর্ম ধরতে পারেনা। তাইতো প্রিয়জনদের অনেকে বলে কী করো সারাদিন! শুধু বসে থাকো! লেপ্টে থাকো । কাজকর্ম নেই, আকাইম্যা কোথাকার। তার মানে হলো আপনি বেশি সময় দিয়ে ফেলেছেন । একটু ব্যালেন্স দরকার।
২। কাউকে যখন আপনি প্রচুর অর্থ দেন বা গিফট দেন বা বস্তুগত যেকোন কিছু দেন তার মানে আপনি তাকে সময়ই দিচ্ছেন। মানে ওই অর্থ কামাতে আপনি যে সময় ব্যয় করেছেন তা আপনি তাকে দিলেন। যারা অর্থ বা গিফট পায় তারাও খুশি হয়। কিন্তু বারংবার বা নিয়মিত অর্থ বা গিফট পেতে পেতে প্রায়ই বলে থাকে, সারাদিন কই থাকো? একটুও সময় দাওনা। খালি অফিস, ব্যবসা, অর্থ উপার্জন। ইত্যাদি। তাদেরকে যে অর্থ বা গিফট দিচ্ছেন তার জন্য যে সময় যাচ্ছে তা যে আসলে তাদেরই তরে তা প্রিয়জনরা বুঝতে চান না প্রায়শ। তার মানে আপনি অর্থ কামাতে বেশি সময় ব্যয় করে ফেলছেন। একটু ব্যালেন্স দরকার।
৩।কেউ কেউ আছেন খুব ব্যালেন্সড। অর্থ আয় করে। অর্থ দেয় গিফট দেয় আবার সময়ও দেয়। মানে সবকিছুর কাম্য ব্যবহার করে এবং ভারসাম্য রক্ষা করে।
পরিতাপের বিষয় হলো বেলাশেষে এ ভারসাম্য রক্ষাকারী লোককেও শুনতে হয় কী এমন দাও! (অর্থ/গিফট), এটাতো দাওনি, ওটাতো দাওনি, আরও ভালোটাতো দাওনি। কী এমন সময় দাও। কিংবা সারাদিনেতো শুধু এটুকু সময় দাও, সপ্তাহেতো মাত্র এটুকু দিন দাও, বছরেতো মাত্র একটা দিন দাও! ফোনতো করোইনা, দেখতেতো আসোইনা! ছমাসে নমাসে একবার!
মানে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হলোনা। মানুষের চাওয়ার শেষ নেই। চাওয়ার শেষ হলে আবার লাগে অন্য নেশা। না চাওয়ার জিনিস চাওয়া। রবীন্দ্রনাথ যেটাকে বলছেন “তোরা পাবার জিনিস হাটে কিনিস রাখিস কিনে ঘরে, যারে যায়না পাওয়া তারই হাওয়া লাগলো কেন মোরে…যা না চাইবার তাই কেন চাইরে, যা না পাইবার তাই কেন পাইরে“।
শিক্ষণ: মানুষ আপনাকে সময়, অর্থ, গিফট, ভাবনা যাই দিকনা কেন, যতটুকুই দিকনা কেন তা গ্রহণ করুন সাদরে। যখন সময় দেয় সেটাকে অর্থ ও ভালোবাসা হিসেবেও গ্রহণ করুন আবার যখন অর্থ/গিফট দেয় সেটাকেও সময় ও ভালোবাসা হিসেবেও গ্রহণ করুন। উচ্ছসিত প্রশংসা করুন এবং স্বীকৃতি দিন ঘরে ও বাইরে। প্রকাশে ও গোপনে। আপনি নিজেও সবাইকে সকল প্রিয়জনকে সময়, অর্থ, গিফট দিন অবিরত এবং ভাবনায় ঘিরে রাখুন সারাক্ষণ।
অভাব, অনুযোগ, অভিযোগ, ইত্যাদি থাকবেই। থাকাটা জীবনেরই অংশ। চলুকনা। তবু আপনারে বিলিয়ে যাই।
দিব আর নিব। মিলব আর মেলাবো।
(সফিকুল ইসলাম-জানুয়ারি ২০১৯, ব্রিসবেন।)
-ড. সফিকুল ইসলাম।
(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )