খন্ডচিত্র, জাপান
জাপানে সবচেয়ে বেশি যেটা চোখে পড়ে সেটা হলো লোকের ব্যস্ততা। রাস্তা দিয়ে যারা চলে তাদের মুখ দেখতে মজা আছে- হাতে ছাতা আর ব্যাগ নিয়ে হুস হুস করে চলছে কেউ, কেউবা কানে আইপড লাগিয়ে হনহন করে চলছে, পাশের লোকদের উপর ভ্রূক্ষেপ নেই, মুখে যেন মহা উদ্বেগ, সময় তাদের ফাঁকি দিয়ে না পালায় এই তাদের প্রাণপণ চেষ্টা। মানুষ নয়, যেন মেশিন চলছে। অফিস বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোথাও এক সেকেন্ড দেরী হবার উপায় নেই। মানুষ, গাড়ী, আর ট্রেন সব বিরামহীন ছুটছে আর ছুটছে। এত যে ব্যস্ততা কোন মানুষকে বা কোন গাড়িকে ট্রাফিক সিগনাল অমান্য করতে দেখলামনা।নিয়ম মানা যেন তাদেঁর অস্থি-মজ্জায়।এই ব্যাতি-ব্যস্ততায় কারো সাথে ধাক্কা লেগে গেলে ৪৫ ডিগ্রী নুয়ে দুঃখিত বলেন। দুজনেই বলেন। আমাদের মতো অন্যকে দোষারোপ করে রেগে গিয়ে অগ্নিশর্মা হননা।বরং নিজের দোষ স্বীকার করে হাস্যমুখে বিদায় নেন। ঝগড়া করার সময় কোথায়? সবকিছু যে সময় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সমস্ত জাপানময় রেলওয়ে। প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর এক-একটা ট্রেন যাচ্ছে। জাপানের অনেক শহরে গিয়েছি; সবখানেই সবসময় দেখি হুস হাস করে ট্রেন ছুটছে। দেশটা তো অনেক দ্বীপের সমাগম। প্রতিটা শহর ছবির মতো- একপাশে পাহাড়, অন্যপাশে সমুদ্র। প্রতিটি শহরই এই এক রত্তি, দু-পা নিচে চললেই ভয় হয় পাছে সমুদ্রে গিয়ে পড়ি, দু-পা উপরে হাটলে হাপিয়ে উঠি, ওদিকে যে পাহাড়। এখানে এত ট্রেন যে প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই মনে হয়েছে কোন কোন শহরে। কতবার যে আনমনে ট্রেন মিস করেছি, কিন্তু গন্তব্যে পৌছতে কোন সমস্যা হয়নি।প্রতি পাঁচ মিনিটেই যে ট্রেন। আমার বাংলাদেশে একবার ট্রেন মিস হলে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রতীক্ষা ছাড়া কোন উপায় নেই।এখানকার চিত্র ভিন্ন। ট্রেন বিকল হয়েছে এমন ঘটনা কল্পনাও করা যায়না এখানে, ট্রেনের দু-এক মিনিট দেরী হয়েছে এমন ঘটনা আবহাওয়া খারাপ না হলে দেখা যায়না।