Detail

Home - শিক্ষা - স্কুল ম্যানেজিং কমিটি : ফ্রেন্ডলি ফায়ার

স্কুল ম্যানেজিং কমিটি : ফ্রেন্ডলি ফায়ার

যা কিছু ভালো উদ্দেশ্যে করা হয় তাকে খারাপভাবে ব্যবহারে আমরা পটু। যেসব উদ্যোগ নিজে থেকে খারাপ ফল বয়ে আনে এটাকে ড: আকবর আলী খান নাম দিয়েছেন ফ্রেন্ডলি ফায়ার। যেমন নলকুপ বসানো হয়েছিল ভালো কাজে, কিন্তু এটা এখন আর্সেনিক পানি দেয়। ফ্রেন্ডলি ফায়ার! কিন্তু যখন কোন ভালো উদ্যোগকে আমরা খারাপভাবে ব্যবহার করি, বা মন্দ উপায়ে বা কুউদ্দেশ্যে ব্যবহার করি তখন তা আর ফ্রেন্ডলি ফায়ার না। এটাকে নাম দেয়া যায় পলিটিক্যাল ইকোনোমি লেড ফ্রেন্ডলি ফায়ার। তথা আমরা নিজের স্বার্থে ভালো উদ্দেশ্যে করা সিস্টেমকে ব্যবহার করি, ফলশ্রুতিতে মন্দ ফল বয়ে আনে।

এরকম কয়েকশ উদাহরণ দেয়া যাবে। আপনাদের কাছেও আছে। একটি হলো স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি। বরিশালের প্রিন্সিপালের গায়ে মল ঢেলে দেওয়ার যে ঘটনা তা কোন একটি ঘটনা নয়। এরকম ঘটনা বাংলাদেশে হাজার হাজার। শুধু এখন তা নয়। সব আমলেই।

ম্যানেজিং কমিটি করা হয়েছিল চমতকার উদ্দেশ্য। আগে সাধারণত উপজেলা বা জেলার বড় আমলারা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিল। প্রতিষ্ঠান সংখ্যা বাড়ায় ও স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করতে এখন সভাপতি হওয়ার রেওয়াজ ও নীতিমালা পাল্টেছে। ম্যানেজিং কমিটি হবে প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত নাগরিকদের নিয়ে যারা সবসময় আশেপাশে থাকেন, যারা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকলে প্রতিষ্ঠানের সু:খে দু:খে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। মায়েরা যেমন বলে “সংসার চালাই আমি, আমিই ভালো জানি“ তেমনি যারা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে থাকেন, অভিভাবক, প্রাক্তন ছাত্র, সংশ্লিষ্ট সমাজের নেতৃত্ব তারাই প্রতিষ্ঠানের ভালো, মন্দ, ভবিষ্যত সব ভালো জানবে। সেকারণেই ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা স্থানীয় বাসিন্দা হবেন মর্মে সরকার পলিসি তৈরি করেছেন।

কিন্তু আমরা বলি একটা মনে থাকে আরেকটা। লিখি স্কুলের উন্নয়ন করবো, এসে অন্যটা করি। লিখি জনসেবা, করি আপনসেবা। এ অবস্থায় গ্রামে গঞ্জে, জেলা উপজেলায় কী হয় তা বলার ভাষা নেই। বরিশালের প্রিন্সিপালের ভিডিওটি দেখলে বুঝতে পারবেন, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হবার জন্য বা সভাপতি হবার জন্য কতলোকে কত কী করে! কোথাও খুন হয়, কোথাও থাপ্পড় দেয়, কোথাও কান ধরায়, কোথাও মেয়েছেলেকে অপমান করে, কোথাও বিয়েশাদী ভেংগে দেয়, কোথাও একঘরে করে, কোথাও চাকুরিচ্যুত করে, কোথাও মামলা চলে, কোথাও আরও কত কী! স্থান কাল পাত্রভেদে হয়তো মাত্রা কিছু কম বা আরো মন্দ হয়ে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন মাত্রা ও বৈচিত্র্যের ঘটনা বিভিন্ন স্কুলে চলমান।

জাতীয় পর্যায়ের লিডারদের সাথে ম্যানেজিং কমিটির সম্পর্ক আছে। ঢাকায় বসে ঠিক করা হয় কোন কমিটির সদস্য বা সভাপতি কে হবে।উপজেলার জেলার ইউনিয়নের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্বার্থ কাজ করে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বা সভাপতি হওয়ার পেছনে।আত্মীয়-স্বজনদের প্রভাব ও বলয় কাজ করে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বা সভাপতি হওয়ার পেছনে।প্রতি গ্রামে কিছু গোষ্ঠী/পাড়া/বংশ পরস্পরা রয়েছে যাদের প্রভাব, প্রতিপত্তি, লিগ্যাসি কাজ করে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বা সভাপতি হওয়ার পেছনে।

গ্রামীন রাজনীতি আগেও সুকঠিন ছিল এখনো রয়েছে। গ্রাম শুধু জসিমউদ্দীনের সবুজ শ্যামল আলাবোলাই না, এখানেও রবীন্দ্রনাথের গোরা উপন্যাসের মতো ধর্ম, রাজনীতি, বংশানুক্রম, রীতি, আচার, প্রভাব, কৃষ্টির হাজার মিথস্ক্রিয়ার প্যাঁচ কাজ করে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি নিয়েও এরকম খেলা চলে।

স্কুলের সেবায় কেউ আসেনা। অনেক টাকার মালিক আসে কিছু নাম কামাতে, অনেক বড় পদওয়ালা আসে নতুন পদে ভাগ বসাতে, রাজনৈতিক নেতা আসে সমাজসেবক হতে, গ্রামীন নেতা আসে শিক্ষার নেতা হতে, প্রভাবওয়ালা আসে আরো প্রভাব বিস্তৃত করতে। তথা একেকজনের কেবলা আলাদা হলেও মক্কা একটা। নিজের স্বার্থ!

হয়তো বাড়ির সীমানা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে, গ্রামে প্রভাব নিয়ে ঝামেলা হয়েছে, রাজনৈতিক বা সামাজিক পদ পাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়েছে, সালিশী বা বৈঠকে কোন কারণে নাজেহাল হয়েছে, বাজারের কমিটি নিয়ে বচসা হয়েছে, ঈদগাহ কমিটি নিয়ে লস হয়েছে, টাকা পয়সা লেনদেন নিয়ে প্রতারণা হয়েছে, জমিজমার বিক্রি নিয়ে নিয়ে প্যাঁচ লেগেছে। সব হিসাবকিতাব এসে এখানেও টোকা দেয়। সব ঝামেলা এসে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সাথেও যোগ হয়। সহীহ নিয়তে শুধু স্কুলের সেবা করবো এ মন নিয়ে কেউ আসেনা। সবাই মনের ভিতর আলাদা খেলা নিয়ে আসে।

সকল খেলায় সাঙ্গ হয় স্কুলের মান, আর মানসম্মত শিক্ষা।

কোন কোন সময় প্রধান শিক্ষক বা প্রিন্সিপালরা খেলার পুতুল হন। কোন কোন সময় প্রতিবাদ করে টিকে থাকেন, কোন কোন সময় বরিশালের ঘটনার মতো অপমানিত হন। সবাই যে খারাপ তা নয়। অনেক সদস্য, অনেক সভাপতি অনেক ভালো কাজ করে যাচ্ছেন। তবে হাজার নকলের ভিরে ভালোদের পাওয়া দু:স্কর। আর যদি কেউ ভালো মন নিয়ে সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যান তারাও নানান সময় নানান কালিমা, মিথ্যা অপবাদ, লাঞ্জনা, গঞ্জনা নিয়ে ফেরত আসেন।

সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী

রেখেছো বাঙ্গালী করে

মানুষ করনি।

-ড. সফিকুল ইসলাম।

(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )

Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD
error: Content is protected !!

My Shopping Cart