প্রবাসী
দেশের কেউ বিদেশে বেড়াতে গেলে বা ঘুরতে গেলে বা কাজে গেলে প্রবাসীরা যখন পায়, তারা খুব আন্তরিকতা দেখায়। প্রবাসীরা দেশের কাউকে পেলে যে পরিমাণ সময় দেয়, সম্মান দেয়, যত্ন নেয়, প্রবাসীরা দেশে গেলে দেশের তারা তার কিছুই করেনা। উল্টো দুনিয়ার অভিযোগ অনুযোগ করে। যেমন
আসলা তিনদিন হয়ে গেলো, একবারও ফোন দিলানা।
আসলা একমাস হয়ে গেলো, একবারও দেখতে আসলানা
শুধু চকলেট আনছো আর কিছু আনলানা।
শুধু শ্যাম্পু আনছো , মেকাপ বক্স দিলানা।
স্যামসাং এর মোবাইল দিয়েছো, আইফোন দিলানা।
২০ ক্যারেটের সোনা আনছো, ২২ ক্যারেট দিলানা। ডাইমন্ড আনলে কী এমন হতো? ইত্যাকার নানান অভিযোগ অনুযোগ।
অথচ হবার কথা উল্টাটা।
মানে প্রবাসী অনেক কষ্ট করে সেখানে কাজ করে, রান্না করে, কোনরকমে ঘুমায়। সুতরাং সে দেশে আসলে আত্মীয়স্বজন, গ্রামবাসী, প্রতিবেশী তাকে দেখতে আসা উচিত।
প্রবাসীরা দেশে এলে, পরিবারের সবাই তাঁকে ভালোমন্দ খেতে দেওয়া উচিত, ভালো বিছানা, আরামের পরিবেশ দেওয়া উচিত।
প্রবাসী দেশে আসলে তারে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো উচিত। সামাজিক যথাযথ পরিবেশে তাকে সম্মান দেওয়া উচিত।
প্রবাসী দেশে এলে ও সরকারি অফিসে গেলে তাকে ছোহবতের সহিত তরতিব করে সেবা দেওয়া উচিত। মুক্তিযোদ্ধা এলে যেমন সম্মান দেখাই, তেমনি প্রবাসীরা পরিচয় দিলে, তাকেও অনুরূপ সম্মান দেওয়া উচিত।
২।
প্রবাসীরা দেশ, পরিবার ও সমাজ নিয়ে যতটা ভাবে;
পরিবার, সমাজ ও দেশ প্রবাসীদের নিয়ে ততটা ভাবেনা।
৩। প্রবাসীরা যে পরিমাণ কষ্ট করে,
প্রবাসীদের উপর নির্ভরশীল বা আধা-নির্ভরশীল পরিজন ও স্বজনরা তার হাজার ভাগের এক ভাগ কষ্টও করেনা।
৪। প্রবাসীরা সারাদিন কাজ করে, আবার ঘরে এসে রান্না-বান্নাও করে, ঘরদোর পরিস্কার করে, কাপড়চোপর ধোয়। আবার প্রতিদিন নিয়ম করে দেশে ফোনও দেয়। অথচ প্রবাসীদের স্বজন যারা দেশে থাকে তারা হয় কিছুই করেনা, করলেও যে কোন একটা করে যেমন অফিস করা বা বাসায় কাজ করা। ত্রিমুখী কাজ করতে হয়না। দিনরাত কাজ করতে হয়না।
৫। প্রবাসীদেরকে স্বজনরা টাকার জন্য যতটা স্মরণ করে অন্য কারণে ততটা স্মরণ করেনা। মানে যখন টাকা লাগবে তখন সাথে সাথে ফোন, কিন্তু সামাজিক কোন সিদ্ধান্ত, পারিবারিক কোন সিদ্ধান্ত, বিয়েশাদি, মুসলমানি, মাহফিল, পুজা, সামাজিক অনুষ্ঠান, গ্রামীন বৈঠক, নির্বাচন ইত্যাদি কোন কাজে প্রবাসীদের মতামত স্বজনরা নেয়না। তবে ওসব কাজে যদি টাকা লাগে তবে ফোন করে ঠিক টাকাটা চেয়ে নেয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে প্রবাসীদের মতামতকে একেবারে গুরুত্ব দেয়না। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে এরকম বলে
আরে হেতো বিদেশে থাকে, হেতে কিছু বুঝেনা।
আসলে প্রবাসীরাই বোঝে। বেশি বোঝেনা, যথাযথ বোঝে। জটিলতা বোঝেনা, সরল করে বোঝে।
লোভী স্বজনরা কিছু বোঝেনা।
খাঁটি সোনা ছাড়িয়া সবে ধরে নকল সোনা।
সুতরাং, ঘরে-বাইরে, প্রতিবেশিতে, পরিবারে, সমাজে সবখানে
আসুন প্রবাসীদেরকে যথাযথ গুরুত্ব দিই, ভালোবাসা দিই, সম্মান দিই, অনুভব করি।