Detail

Home - সাহিত্যকর্ম - স্নেহ সবসময় নিম্নগামী

স্নেহ সবসময় নিম্নগামী

তখন আমি জাপানে থাকি। স্পন্দনের বয়স এক পেরিয়ে দুইয়ে। আমি একদিন পড়ার রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছি। হঠাত স্পন্দন গ্লাস হাতে নিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলছে।

“বাবা, আনি তাও“ (বাবা, পানি খাও)।

ছেলের হাত থেকে তাড়াতাড়ি গ্লাস নিয়ে চুমুক দিলাম গ্লাসে। এক চুমুক দিয়েই বুঝলাম। পানিটা কেমন যেন। সবসময় যেরকম খাই সেরকমনা।

সুজনকে ডাকলাম। তুমি কি পানি দিয়েছো? স্পন্দন পানি পেল কই? সুজন বললো ‘না‘

বলা বাহুল্য পানি যেখানে থাকে টেবিল বা সিংক বা রান্নাঘর, সেখান থেকে স্পন্দন পানি আনতে পারার কথা না।

স্পন্দনকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আদর করে, ‘পানি কোথা থেকে এনেছো, বাবাকে দেখাও।‘

স্পন্দন আমাকে বাথরুমে নিয়ে গেলো। কমোডের ভেতরে টলটলে পানি দেখিয়ে বললো

এখান থেকে পানি নিয়েছি।

এরপর কী ঘটেছে তা ইতিহাস! হাসবো না কাঁদবো কিছুই বুঝে উঠতে পারিনা। ছেলের মা হাসে, সাথে ছেলেও না বুঝেই মজা পেয়ে হাসে!

(অনেকে হয়তো ইয়াক ইয়াক করছেন, তাঁদের জন্য স্বান্ত্বনা ঢাকা চট্রগ্রামের ওয়াসার পানির লাইনের পানির চেয়ে খুব একটা অপরিস্কার পানি ছিলনা! যেহেতু ফ্ল্যাশ করার পর পানি এটা। )

মরাল: ছোট অবুঝ ছেলের হাতে যুবক বাবা কমোডের পানি খেয়েও হজম করে গেছে প্রায় হাসতে হাসতেই।  অশীতিপর বৃদ্ধ বাবা যদি যুবক ছেলেকে ভুলে কমোডের পানি বা ময়লা পানি এনে দেয়, তবে যুবক সন্তানের প্রতিক্রিয়া কী হবে? ভাবুন, ভাবতে থাকুন।

স্নেহ নিম্নগামী ফ্যাক্ট।

…………………………….

বাপ-ছেলের আলাপ

ছেলে: বাবা, তুমি সবকিছুতে এত সিরিয়াস কেন? সারাক্ষণ এত সিরিয়াস থাকো কেন?

বাবা: যেমন?

ছেলে: এই যেমন তুমি পড়াশোনায় সিরিয়াস, মুভি দেখায় সিরিয়াস, খেলাধুলায় সিরিয়াস, ঘুরাঘুরি নিয়ে সিরিয়াস, কথা বলায় সিরিয়াস, আমাদের পড়া নিয়ে সিরিয়াস, আমাদের খাওয়া নিয়ে সিরিয়াস। আমাদের গোসল নিয়ে সিরিয়াস, আমাদের ফল খাওয়া নিয়ে সিরিয়াস………….।

বাবা: হইসে হইসে, থাম থাম। সিরিয়াস হইলে সমস্যা কী?

ছেলে: না, মানে সমস্যা না। এত সিরিয়াস থাকো কেন? সারাক্ষণ এত সিরিয়াস হইলে কেমনে? সবকিছুতেই সিরিয়াস।

বাবা: (চুপ মেরে যায়)।

( পরে ভেবে দেখলাম। ছেলে বিষয়টা ভালোভাবেই খেয়াল করেছে। বাচ্চার মনেও সেটা ক্লিক করেছে। গভীরভাবে ভেবে দেখলাম সঠিক কথাই বলেছে। ছোটবেলা থেকেই পারিপাশ্বিক, পারিবারিক, সামাজিক বিভিন্ন কারণে হালকাভাবে কাটানোর সময় আজ অবধি পাইনি, সিরিয়াস হয়েই কেটে গেছে দিন, মাস, বছর, যুগ। শ্বাস ফেলর ফুরসত মেলেনি। রিলাক্স হবার দমও পাইনি। নিজের দায়িত্ব নিজে নিয়েছি, আর অন্যদের দায়িত্বও ঘাড়ে চাপিয়ে গিয়েছি একের পর এক। টারগেটের পর টারগেট সেট করে জীবন চলে গেছে সিরিয়াস সিরিয়াস খেলতে খেলতে।

হালকাচ্ছলে, ক্রীড়াচ্ছলে, কৌতুকচ্ছলে, যা হবার হবে টাইপ ভেবে বা সবকিছু ফু দিয়ে উড়িয়ে সময় কাটাবার বেলা পাইনি কখনো। )

ছেলে ঠিকই ধরেছে আমায়

সকলের সব হাসিখেলায়

প্রয়োজনের তাগিদে

সিরিয়াস থেকেছি অবলীলায়।

-ড. সফিকুল ইসলাম।

(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )

Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD
error: Content is protected !!

My Shopping Cart