তিনটি উপদেশ মানলে আপনার জীবন পাল্টে যাবে
প্রথম পর্ব
মানুষের ব্যবহার, আচরণ ও অভিব্যক্তিতে কষ্ট পেতে নেই। মানুষের বৈশিষ্ট্যই এরকম। পাতে খেয়ে পাতে হাগে। যার জন্য তুমি সর্বোচ্চ সময়, শ্রম, ও অর্থ দিবা, সেই তোমারে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেবে। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক একবার এক লোককে উপকার করার জন্য ১০০০ টাকা দিয়েছেন। সাথে ১০ টাকা দিলেন। ওই লোক বললো, আমিতো ১০০০ টাকা চেয়েছি, বাড়তি ১০ টাকা কেন? শেরে বাংলা তখন বললো, আমি জানি উপকার যখন করেছি, একদিন তুমি আমারে বাঁশ দিবা! তাই ১০ টাকা আগেই দিয়ে দিলাম। ভবিষ্যতে আমাকে বাঁশ দিতে তোমার ইচ্ছে হলে তোমার বাঁশ কিনতে হবেনা!? সেইজন্য এই বাড়তি দশ টাকা!
মানুষের স্বভাব এমন যে তুমি যত সম্মান দিবা আর কেয়ার করবা সে তোমারে পেয়ে বসবে আর ইগনোর করবে। তাই বলে কি ভালো কাজ, ভালো আচরণ, জনসেবা, মানবসেবা বন্ধ থাকবে? না, তা নয়, সবই করবে, নিজের জন্যই করবে। নিজের আত্মার জন্যই করবে। আত্মসন্তুষ্টির জন্য করবে। তুমি মানুষ তাই করবে। পরিবারে থাকলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে থাকতে হবে, সমাজে থাকলে সমাজের সবাইকে নিয়ে থাকতে হবে, দেশে থাকলে দেশের সবাইকে নিয়ে থাকতে হবে, বিশ্বে থাকলে বিশ্বের সবাইকে নিয়ে থাকতে হবে। সৃষ্টি থেকে, আশেপাশের সবার থেকে, কমিউনিটির সবার থেকে সামাজিক সবধরণের উপাদানের শ্বাস-প্রশ্বাস নেবো, আবার সবাইকে এড়িয়ে চলবো সেটা কোন মানুষের কার্য হতে পারেনা। আঙ্গুলে ক্যান্সার হলে আমরা হাত কাটিনা, প্রয়োজনীয় অংশটুকু শুধু কেটে ফেলি।
“উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে
তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে।“
যে তোমারে ইগনোর করলো সেটা তার সমস্যা। যে তোমার সময়, শ্রম কেয়ার নিয়ে গিয়ে সব ভুলে শুধু তোমার বদনাম রটালো সে তার নিজের রূপই প্রকাশ করলো। তাতে সে সাময়িক হাসি তামাশা করতে পারবে, দীর্ঘমেয়াদে তার স্বভাবের শিক্ষা পেয়ে যাবে।
জীবনে এমন অভাবনীয় ঘটনাও ঘটে যে, যার জন্য তুমি একজনের চক্ষুশুল হলে সেই গিয়ে তার সাথে ভাব জমাবে আর তোমার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধর করবে। করুক গিয়ে।
“কুকুরের কাজ কুকুরে করেছে, কামড় দিয়েছে পায়
তাই বলে কি ……………………“
যতকিছুই হোক, ভালো কাজ, ভালো আচরণ, ভালো অভ্যাস, ভালো চিন্তা চালু রাখা জরুরি।
“আমার ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তাঁর ঘর
আপন করিয়া কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।“
এরই মধ্যে নিজেকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেল্ফ রেসপেক্ট বা আত্মসম্মানবোধ বিষয়টাওতো আছে, তাইনা। সবসময়ই বিনয়ী থাকা ভালো । ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ নিজের ডিগনিটি বজায় থাকে। যে বারবার ইগনোর করে যায়, তাকে বারংবার সুযোগ না দেওয়াটা অহঙ্কার নয়, সেলফ-রেসপেক্ট।
দ্বিতীয় পর্ব
যদি সারাদিন আপনি কী করবেন-তার কোন লক্ষ্য স্থির না থাকে, তবে সারাদিনে হয়তো কিছুই করা হবেনা। পক্ষান্তরে আপনি যদি প্রতিটি কাজ ১ ঘন্টায় করা যায়, এমন ১২টি কাজ ঠিক করেন যে একদিনে সম্পন্ন করবেন, তবে দিনশেষে দেখবেন প্রায় ১২টি বা কমবেশি কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। কিংবা প্রতিটি কাজ ৬ ঘন্টায় করা যায় এমন ২টি কাজ ঠিক করেন তাও প্রায় সম্পন্ন হবে। তাই প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই দিনের লক্ষ্যমাত্রা সেট করেন। তাহলে আপনি প্রতিদিন শেষে দেখবেন যে আপনার বেশ কিছু কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শুধু সেট করলেই হবেনা, কাজও করতে হবে।
কাজ বলতে আমি খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, গোসল, খাবার তৈরি, বিশ্রাম এসব মিন করছিনা এগুলো থাকবেই। এর বাইরে কাজ মিন করছি।
লক্ষ্য এমন হওয়া উচিত না যে আজ ৯-৫টা অফিস করবো। লক্ষ্য হবে আজ অফিস টাইমে এই এই স্পেসিফিক কাজ করবো। সাথে চলমান বা হঠাত কাজতো করবোই। তাহলে দেখা যাবে দিনশেষে অনেকগুলো কাজ বা আনন্দ বা অভিজ্ঞতা অর্জন হবে।
লক্ষ্য এমন হওয়া উচিতনা যে আজ সারাদিন বাসায় থাকবো। লক্ষ্য হওয়া উচিত বাসায় থেকে আজ এতক্ষণ ঘুমাবো, এতক্ষণ বিশ্রাম করবো, এতক্ষণ আড্ডা দিবো, এতক্ষণ বাগান করবো, এতক্ষণ ফোন করবো, এতক্ষণ বই পড়বো, এতক্ষণ…………….। তাহলে দেখা যাবে দিনশেষে অনেকগুলো কাজ বা আনন্দ বা অভিজ্ঞতা অর্জন হবে।
লক্ষ্য এমন হওয়া উচিত না যে আজ অমুকের বাসায় যাবো। লক্ষ্য হওয়া উচিত আজ অমুকের বাসায় গিয়ে এই এই করবো, এবং আসা যাওয়ার পথে সেই সেই করবো। তাহলে দেখা যাবে দিনশেষে অনেকগুলো কাজ বা আনন্দ বা অভিজ্ঞতা অর্জন হবে।
লক্ষ্য এমন হওয়া উচিতনা যে আজ সারাদিন লিখবো। লক্ষ্য হওয়া উচিত কী লিখবো, কতটুকু লিখবো এবং কী মানের লিখবো, …………..। তাহলে দেখা যাবে দিনশেষে অনেকগুলো লেখা বা আনন্দ অর্জন হবে।
লক্ষ্য এমন হওয়া উচিতনা যে আজ সারাদিন জনসেবা করবো। লক্ষ্য হওয়া উচিত কী কী করবো, কার জন্য করবো, কীভাবে করবো, কতক্ষণ ধরে করবো।
এমনটা প্রতিদিনই করতে হবে তা নয়। হয়তোবা সপ্তাহের দুএকদিন বা মাসের কয়েকদিন একেবারে লক্ষ্যহীন হাবিজাবি করে এলোমেলো যাবে। সেটাও জীবনই। সেটারও দরকার আছে। কিচ্ছু করবোনা দুনিয়া গোল্লায় যাক-এমন দুএকদিনও প্রতি মাসে থাকা জরুরি।জীবনে সব স্পাইসই লাগে।
তবে দিনের পর দিন মাসের পর মাস লক্ষ্যহীন হওয়া উচিত নয়। তাতে মানব জীবনের প্রডাকশন, সৃষ্টি বা অর্জন বা অবদান কম হয়, দক্ষতা থাকেনা, ফলপ্রসূ হয়না।
দিনশেষে অনেকগুলো কাজ বা আনন্দ বা অভিজ্ঞতা অর্জন সম্পন্ন হলে মনের ভেতর ‘আমি পেরেছি‘ ‘আই হ্যাভ ডান সো অ্যান্ড সো‘- এরকম কিছু সুখানুভূতি যোগ হয়। সে সুখটুকু জরুরি। সারাদিন কিছুই করলামনা -অনুশোচনার চেয়ে এর সুখানুভূতিটুকু অনেক উপকারি।
তৃতীয় পর্ব
যে কোন নিয়োগ পরীক্ষায় কয়েকজন নিয়োগ পায়। বাকি লাখ লাখ পায়না।
যারা চাকুরি পায় তারা চুপ থাকে। যারা পায়না তারা সবাই বলে বেড়ায় যে, ‘মামা ছাড়া চাকুরি নাই, টাকা ছাড়া চাকুরি নাই‘। এবং তারা বলতে বলতে দেশ বাজার রাস্তাঘাট গরম করে ফেলে। তারা যে পারেনা, পড়াশোনা করেনি, কিংবা যোগ্যতা নেই একথা কেউ বলেনা। এই লাখ লাখ লোকই বলে বেড়ায় যে টাকা ছাড়া চাকুরি হয়না, মামা ছাড়া চাকুরি হয়না। সুতরাং একটি নেতিবাচক বার্তা বেকার যুবকদের মাথায় ঢুকে এবং নতুন যারা পাস করতেছে তারাও এসব খবর শুনে ভেংগে পড়ে। এরকম নেতিবাচক দিক কম প্রচার হওয়া উচিত। তা হয়না।
বাস্তবতা হচ্ছে টাকা ছাড়া চাকুরি হচ্ছে, মেধায় চাকুরি হচ্ছে। হাজার হাজার হচ্ছে। যদি যোগ্যতা থাকে তবে কোথাও না কোথাও হবেই।
এখন প্রশ্ন হলো তাহলে কি দেশে দুর্নীতি নেই, টাকার বিনিময়ে চাকুরি হয়না? হয় দুর্নীতি হয়, টাকা দিয়েও চাকুরি হয়, নেতা বা মামা ধরেও হয়।
মেধাবীরা কি বাদ পড়ছেনা? পড়ছে। তবে তারা এ নিয়ে খুব উচ্চ্যবাচ্য করেনা। নিজের সমস্যা খুঁজে দেখে, পুনরায় চেষ্টা করে এবং অপেক্ষাকৃত ছোট চাকুরিতে নিজেকে সপে দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
তাহলে সমাধান কি?
সমাধান হচ্ছে আপনি যদি নিশ্চিত মনে করেন যে আপনার যোগ্যতা নাই, প্রতিযোগিতায় টিকবেননা, এবং আপনার যদি বিশ্বস্ত নেতা/মামা থাকে আর আপনার যদি টাকা থাকে তবে যান গিয়ে টাকা দেন। অনৈতিকতায় হারান, চাকুরি নেন।
কিন্তু আপনার যদি যোগ্যতা থাকে তবে চেষ্টা করে যান, কোথাও না কোথাও হবে। আমার নিজের হয়েছে, পরিবারে হয়েছে এবং জানাশোনা হাজার বন্ধুর হয়েছে। কোথাও যে ঠকানো হয়নি তা নয়, ভাইভাতে নম্বর কম দিয়েছে। দিবেই। পেছনে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। হবেই। এসব নিয়ে ভাবিনি।
কিন্তু আপনার যদি বিশ্বস্ত মামা/নেতা না থাকে তাহলে কাউকে টাকা দিবার দরকার নেই।
আপনার যদি টাকা না থাকে তবে নিজেরে যোগ্য করে গড়ে তুলুন।
অনেকে চাকুরির জন্য রাজনীতিতে যোগ দেন, তাদের জন্য পরামর্শ হলো ‘যে পরিমাণ সময়, শ্রম, অর্থ আপনি খরচ করেন ছোট চাকুরির জন্য তার চেয়ে কম শ্রমে ও কষ্টে আপনি পড়াশোনা করে নিজেই চাকুরির যোগ্য হয়ে উঠতে পারবেন।
কিংবা এর চেয়ে কম শ্রম, সময় ও অর্থে নিজের ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবেন। এবং বিশ বছর পরে দেখবেন ব্যবসা করে ওসব পিয়ন/সহকারি/পুলিশের চাকুরির হাজার গুণ ভালো সম্মান নিয়ৈ নিজের ব্যবসার আয়ে ভালো রোজগার করছেন।
নিজের পায়ে, নিজের হাতে নিজের মাথায় ভরসা করেন। টাকা/মামা/নেতার কথার ফাঁদে পড়বেননা।
সফিকুল ইসলাম, ২০১৯।
-ড. সফিকুল ইসলাম।
(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )