নজরুলের সাথে পত্রমিতালি
প্রিয় নজরুল,
,
জীবিত অবস্থায় তোমারে পাই নি। তবু তোমার লেখার মাঝেই তোমারে আরও বেশি জীবন্ত পাই। আর তোমার স্তবগান গাই।
তোমারে দেখি অনেকেই ভালোবাসে। তোমার বিদ্রোহ দেখে উচ্চকিত প্রশংসা করে। কিন্তু নিজে বিদ্রোহী হয় না; আশেপাশের কোনো বিদ্রোহও তাদের পছন্দ হয় না। বিদ্রোহ পড়তে ভালো লাগে, বিদ্রোহ করতে ভালো লাগে না। চারপাশে আমরা সবে ঘুমপাড়ানির দল। সবাই অন্ধ, বধির, মূক হয়ে দিন গুজার করি।
.
অনেকেই তোমার প্রেমের কবিতা পড়ে অভিভূত হয়, দ্রবীভূত হয়। তোমার জীবনের বহুপ্রেমকে বাহবা দিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে আশেপাশের এসব হাতছানিকে গোপনে আড়াল করে, কিংবা লোকসমক্ষে কঠোর সমালোচনা করে, ছ্যাঁ ছ্যাঁ বলে ত্যাড়ে আসে। যেন একশো দোররা দিবে, না হয় ইংরেজ সিস্টেমে ফাঁসি দিবে। প্রেমের নামে অপ্রেমই যাদের নেশা, তারাই তোমার প্রেমলীলা পড়ে শুরু করে খচখচ কাশা। পাবলিকলি প্রেম, গোপনে প্রেম, একটি প্রেম বা একাধিক প্রেম কোনোটাই যাদের সয় না, তারাই তোমার জীবনের প্রেমকে দেয় উচ্চতর আখ্যা ।
.
তোমার সাম্যের গান শুনে কত হৃদয় আজও দোলে। সকলে মোরা সমান সমান, জাত পাত শ্রেণীবিবাদ দূরে থাক- বলে আওয়াজ তোলে। কিন্তু তারাই আবার নানান ফ্রেমে মানুষেরে ভাগ করে। শ্রেণীবিভাজনের জগন্য খেলায় মাতে। ভাগাভাগির খেলায় নিজেদের আখের গুছিয়ে অনেকেই অনেক প্রাসাদ তোলে।
.
তোমার প্রতিবাদী মন আর প্রতিবাদী লেখা দেখে কতজন কত প্রশংসা করে। অথচ তাদের কলম থেকে বের হয় না দু‘ছত্র প্রতিবাদের রেশ ধরে। যত্তসব মেরুদন্ডহীন কেঁচো বাস করে আনাচে কানাচে আর লেখক বুদ্ধিজীবী নাম ধারণ করে। এসব দেখে নিশ্চয়ই তোমার কৌতুক বোধ খেলে মনে মনে।
.
কেউ তোমার লেখা পড়ে ধর্ম খুঁজে পায়, কেউ বা পায় অধর্ম। ধার্মিক তোমারে ধার্মিক জানে, নাস্তিক পায় তোমায় নাস্তিক। তুমি ছিলে তোমারই পথে, যাহা ছিল বিলকুল সঠিক।
.
আধ হাতের মানুষ নিজ হাতে মাপতে যায় আশি হাতের নজরুলকে। নজরুল সাগরে হাতরে মরে না জানি কত হাজার আবুল আর মকবুল।
ভুলে ভরা পৃথিবী
ভুল একূল ওকূল।
তবু
যেখানেই থাকো ভালো থেকো
প্রিয় নজরুল।
শুভ জন্মদিন।
-ড. সফিকুল ইসলাম।
(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )