Detail

Home - সাহিত্যকর্ম - বুক রিভিউ - অপ্রকাশিত জীবনানন্দ: মাহবুব মোর্শেদ

অপ্রকাশিত জীবনানন্দ: মাহবুব মোর্শেদ

অপ্রকাশিত জীবনানন্দ নাকি অপ্রকাশিত মাহবুব মোর্শেদ?

পাঠপ্রতিক্রিয়া: ড. সফিকুল ইসলাম।

মাহবুব মোর্শেদের কথা বলার স্টাইলটি আমার ভালো লাগে। তাঁর উপন্যাস ‘তোমারে চিনিনা আমি‘‘ আমার ভালো লেগেছিল। সেকারণেই ‘অপ্রকাশিত জীবনানন্দ ‘বইটি উপন্যাস বা গল্প বা প্রবন্ধ মনে করে কিনি। কেনার পরে দেখলাম না, এটি কবিতার বই। আগামী প্রকাশনীতে বসে পুরো বিকেল ও সন্ধ্যা মিলে ‘‘অপ্রকাশিত জীবনানন্দ‘‘ পড়ে ফেললাম। আমার বইয়ের পাঠকদের অটোগ্রাফ দিই। আর ফাঁকে ফাঁকে  বইটি পড়ি। বইটি আমার খুব ভালো লেগে যায়। সহজ ভাষায় লেখা প্রতিটি কবিতাই আমাদের জীবনের কথাই বলেছে। যারা কবিতা পড়তে চান না। কঠিন বলে এড়িয়ে যান তারাও এ বইটি পড়ে আনন্দ পাবেন। ৪৬টি কবিতায় উঠে এসেছে মানুষ ও সম্পর্ক, সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে নানান ভাবনা, কিংবা পাঠক যা ভাবতে পারে না তেমন কোনো অনুভূতি। প্রথম কয়েকটি কবিতায় আমাদের সমাজ বা চারপাশে ঘটিত নানান অসঙ্গতি ও অবিচার উঠেছে রূপক গল্পে ও ছন্দে ছন্দে। যেমন তিনি লিখেছেন

‘‘একটা লোকই দুটো হয়ে গেছে আচমকা। চমতকার রেঞ্জের মধ্যে হেঁটে যাচ্ছে সোজা। হযরত আজরাইল আরেকটু সামনে…………………….‘‘। যেন আমাদের জানা কোনো গল্পই বলছেন অজানা ঢঙে। কিংবা হেঁটে আসা শ্রমিকের গান কবিতায় তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন নির্মম বাস্তবতা শব্দ ও কল্পনার জাদুতে। বইটিতে প্রেমের কবিতাও রয়েছে যেন আমাদের নিজেদের প্রেমের ঘটনাগুলোই তিনি সাজিয়েছেন কাব্যভঙ্গিমায়। তানহা শিরোণামে ছয়টি কবিতা। পাঠকদের কেউ কেউ ভাবতে পারেন যেন তানহা মেয়েটি কবির জীবনের কেউ। অথচ তানহা ৬ কবিতাটিতে তানহা নিজেই প্রশ্ন করেছে কবিকে,‘‘ তানহা কে?‘‘  সুতরাং তানহা আসলে হতে পারে আমাদের প্রত্যেকের জীবনেরেই গোপন কোনো প্রেম! নওশিন নামেও রয়েছে ৬টি কবিতা। নওশিন তাহলে কে? নওরীন কে? নাবিলা কে? নানান নামের কবিতায় কবি নানান গল্প ও চিত্র ফেঁদেছেন কবিতার ছন্দে ছন্দে যা পাঠক খুব সহজেই নিজের চোখের সামনে দেখতে পারবে, নিজের সাথে মিল পাবে বা কল্পনায় হারাবে। কিংবা ঠোঁট উল্টে বলবে ‘যাহ! এরকম আবার হয় নাকি?‘‘। অথবা বলবে ‘‘কবি কি আমাকে কিছু বললো? বা আমার ঘটনা জেনে গেলো‘‘। রেজওয়ানের সাথে আলাপচারীতায় কবি নিজ হৃদয়ের অনুরণনগুলো বলেছে বা অব্যক্ত সব কথামালা প্রকাশ করেছেন যা যাপিত জীবনে অনেকেই মুখোমুখী হই। আরও কয়েকটি কবিতা যা গভীর প্রেমে মজা কোনো মানুষের দিনলিপি মনে হবে পাঠকের কাছে। যেখানে সম্পর্কের দোলাচলগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কবিতার ভাষায়। ‘‘চুরি করে তোমায় দেখবো, দুরু দুরু বুকে…‘‘ এর মতো অগণিত চরণ পাঠকের মনে থেকে যাবে দিনের পর দিন।

নামটি কেন ‘‘অপ্রকাশত জীবনানন্দ‘‘ তা বোঝা গেলো না। কবি মাহবুব মোর্শেদ নিজেকে জীবনান্দের স্থানে কল্পনা করে অপ্রকাশিত মাহবুবকেই অপ্রকাশিত জীবনানন্দ বলে আখ্যায়িত করেছেন মর্মে আমার মনে হলো। নামকরণে তিনি ধাঁধা ও ধোঁয়াশা সৃষ্টি করার মাধ্যমে বইটির নামকরণ স্বার্থক করেছেন তা নি:সন্দেহে বলা যায়। কবির সহজ ও সাবলীল শব্দচয়ন, প্রয়োগকৌশল, চিত্রকল্প উপস্থাপনে তিনি দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। প্রথাগত আবেগ বাদ দিয়ে বর্তমানের অনলাইনভিত্তিক ব্যস্ত ও অস্থির জীবনের সম্পর্কের বিষয়গুলো উঠে এসেছে তাঁর কবিতায়।

-ড. সফিকুল ইসলাম।

(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )

Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD
error: Content is protected !!

My Shopping Cart