পাখিরোষ: আশরাফ জুয়েল
পাখিরোষে কী সব বললেন আশরাফ জুয়েল?!
‘‘খিদা হইলো দুই ধরণের প্যাডের খিদা, আর চ্যাডের খিদা। গরীব হইলে প্যাডের খিদা বেশি আর বড়লোক হইলে চ্যাডের খিদা বেশি। তুই কি বড়লোক হইবি নাকি ফহিন্নি থাকবি?‘‘ এরকম বেশকয়েকটি কথা নেওয়া যাবে হুকুইম্যা ও সাইদার নকল ভিক্ষা করার গল্পটি থেকে। নিদারুণ বাস্তবতা দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। .
.
‘ছায়াসন্দেহ‘ গল্পটিতে আমাদের আশপাশের বস্তুগুলোও যে কথা বলতে পারে বা আমাদের ঘটানো ঘটনার সাক্ষ্য হতে পারে, হতে পারে ঘটনার অনুঘটক তাও পরিস্কার করে তুলে ধরেছেন লেখক আশরাফ জুয়েল। আরেকটি গল্পে হাসপাতালে বিছানায় থাকা রোগী বা ব্যক্তির সাথে কল্পনায় হারানো কিংবা খোয়াবে কথোপকথন করা বা তার সাথে কল্পরাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার মাধ্যেেম কথাশিল্পী পাঠককে নিজের জগতে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
.
গর্ভনাশ গল্পটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। কথা সাহিত্যিক হিসেবে পাকা হাত রয়েছে আশরাফ জুয়েলের এ কথা বলা যায়। নার্স বা রোগীর রূপের বর্ণনা ছিল অনবদ্য। ভ্যানগগের সাথে রোগীর না বলা বা আধো বলা কথার সংশ্লেষ এবং তা থেকে লেখকের কল্পনার ডালপালা ও জীবন এবং দর্শনের অপূর্ব মেলবন্ধন করা ও কথাশিল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা যেন অপরূপ নকশীকাঁথা! গল্পটি শেষ হওয়ার পরে কতক্ষণ থম মেরে বসেছিলাম।
অন্য একটি গল্পে মামুল ও সুলেখার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে স্ত্রী মায়ার একে একে প্রশ্নের উত্তরে মামুলের কেবল চুপ থাকা এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ও রিয়েল লাইফের উপস্থাপন। শেষ লাইনটি ভালো লেগেছে ।‘‘সন্তান কাছে না থাকা মা আর লিখতে না পারা লেখকের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।‘‘
পাখিরোষ গল্পটির শুরুটা আনন্দ উল্লাস মোডে পড়তে পড়তে শেষে গিয়ে এমন মন খারাপ হলো। মানুষ বা পৃথিবীর নিয়মই এমন। আমরা আসলে পরিবেশ বা প্রতিবেশ বা নিজেদেরকে খুন করছি পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে। রূপক এ গল্পটি থেকে নানান উপসংহার টানতে পারবে পাঠকরা নিজ নিজ জগতমতো। লেখকের র্স্বাথকতা এখানেই।
সবমিলিয়ে ঐতিহ্য প্রকাশনীর এ বইটি দারুণ উপভোগ্য ও সুখপাঠ্য। পাঠকের মনন-মগজ ও চিন্তাজগত নাড়া খাবে। যেসব বিষয় কল্পনাতেও আসে না তেমন সব রূপক দিয়ে গল্পের ছলে বাস্তবতাগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে যে, পাঠক বাস্তব ও অবাস্তবের মাঝে দাঁড়িয়ে কথাশিল্পীর জাদুবাস্তবতায় হারাবে। কথাশিল্প, গল্প, বাঁক, কল্পনা ইত্যাদি যারা উপভোগ করে প্রতি লাইনের প্রতি শব্দে তাঁদের এ বইটি পড়া উচিত।
-ড. সফিকুল ইসলাম।
(লেখাটি ভালো লাগলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। কিংবা ইমেইল করতে পারেন অনুভূতি জানিয়ে Shafiq.bcs@gmail.com। শেয়ার করতে পারেন ফেসবুকে বা লিংকডইনে। )