Detail

Home - সমাজ ও ধর্ম - ওহুদ যুদ্ধ

ওহুদ যুদ্ধ

ওহুদ যুদ্ধের ৭০ জন শহিদদের সমাধি দেখলাম। নবীজির দন্ত মোবারক শহিদ হওয়ার স্থান উহুদ পাহাড়ে উঠলাম। উহুদের ময়দানে মসজিদে নামাজ আদায় করলাম।আলহামদুলিল্লাহ।
.
বিস্তারিত জানতে পড়ুন।
হিজরির শাওয়াল মাসে ইসলামের দ্বিতীয় যুদ্ধ ওহুদ সংঘটিত হয়। মদিনার মসজিদে নববি থেকে উত্তরে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ওহুদের প্রান্তর। বদর যুদ্ধের ঠিক এক বছর পর ওহুদ যুদ্ধ হয়। মক্কার অমুসলিম ও মদিনার মুসলিমদের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
.
বদর যুদ্ধের পরাজয়ের শোক মক্কার জনগণ মানতে পারছিল না। ওই যুদ্ধে বেঁচে যাওয়া নেতারা পরামর্শ করলেন আবু সুফিয়ানের বাণিজ্য কাফেলায় যাঁদের ব্যবসা রয়েছে, তাঁরা শুধু মূলধন ফেরত পাবেন এবং লভ্যাংশের টাকায় সামরিক শক্তি অর্জন করে মুসলমানদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া হবে। ঘরে ঘরে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। কিনানা ও তিহামা গোত্রের লোকেরা একেবারে প্রস্তুত হয়ে গেলেন। হাবশিরা বর্শা নিক্ষেপে পারদর্শী, তাঁদের তির লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। তাই ওয়াহশি নামের এক হাবশি ক্রীতদাসকে মুসলমানদের হত্যার বদলে মুক্তির প্রলোভন দেওয়া হয়। যুদ্ধের সার্বিক প্রস্তুতি শেষে মদিনার দিকে রওনা হয় আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে তিন হাজারের বেশি যোদ্ধা। তাদের মধ্যে ৭০০ যোদ্ধা ছিল বর্ম পরিহিত। ছিল ২০০ ঘোড়া ও ৩০০০ উট। সঙ্গে নেওয়া হলো নারীদের। তাদের কাজ ছিল গানে গানে যোদ্ধাদের মনোবল চাঙা রাখা।
.
অপরদিকে মুসলিম বাহিনীর মোট সেনাসংখ্যা ছিল এক হাজার। এর মধ্যে ১০০ জন বর্ম পরিহিত ছিলেন এবং ৫০ জন ছিলেন অশ্বারোহী। হজরত মুহাম্মদ (সা.) মুসলিম বাহিনীকে তিন ভাগে বিভক্ত করেন। এগুলো হলো মুহাজির বাহিনী, আউস বাহিনী ও খাজরাজ বাহিনী। এই তিন বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন যথাক্রমে মুসআব ইবনে উমায়ের, উসাইদ ইবনে হুজাইর ও হুবাব ইবনে মুনজির। মুসলিম বাহিনী মদিনা থেকে যুদ্ধের জন্য বের হয়। তারা শাওত নামক স্থানে পৌঁছানোর পর যুদ্ধে অস্বীকৃতি জানান আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এবং তিনি তাঁর ৩০০ অনুসারী নিয়ে দলত্যাগ করেন। তখন বাকি ৭০০ সৈনিক নিয়ে মুসলিমরা ওহুদের দিকে যাত্রা করেন। যাত্রাপথে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি না হওয়ার জন্য ভিন্ন পথ অবলম্বন করা হয় এবং পথপ্রদর্শক ছিলেন আবু খাইসামা। এ সময় প্রতিপক্ষকে পশ্চিমে ছেড়ে দিয়ে বনি হারিসা গোত্রের শস্যখেতের মধ্য দিয়ে ভিন্ন একটি পথ অবলম্বন করে ওহুদের দিকে মুসলিম বাহিনীকে নিয়ে যাওয়া হয়। মল্লযুদ্ধের শুরুতে অমুসলিম বাহিনীর পতাকাধারী তালহা ইবনে আবি তালহা এগিয়ে এলে হজরত আলী (রা.) তাঁকে আক্রমণ করেন। এতে তালহা নিহত হন। আবু সুফিয়ানের অশ্বারোহী বাহিনী দু-দুবার গিরিপথে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেল। তারা রণে ভঙ্গ দিয়ে পালাতে লাগল।
.
এদিকে ওহুদের প্রান্তরে ছোট্ট আকারের পাহাড় জাবালে রুমা অর্থাৎ রুমা পাহাড়ে নবীজি ৫০ জন তিরন্দাজ সাহাবিকে নিযুক্ত করে বলেছিলেন, ‘আমাদের জয়-পরাজয় যা-ই হোক, তোমরা এখানে থাকবে।’ রাসুল (সা.) তাঁদের আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)-এর নেতৃত্বে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শত্রু বাহিনীকে পালাতে দেখে নিজেদের জয় হয়েছে ভেবে তাঁরা নবীজির নির্দেশনার কথা ভুলে যান এবং গনিমতের মাল সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু নবীজির নির্দেশ উপেক্ষা করার মাশুল তাঁদের দিতে হলো। যখন তিরন্দাজরা গনিমতের মাল সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন, তখন অমুসলিম বাহিনী গিরি অতিক্রম করে মুসলমানদের পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দিল।
.
অনাকাঙ্ক্ষিত এই পরিস্থিতিতে মুসলমানরা দিগ্‌বিদিক ছুটতে লাগলেন। অমুসলিমদের আক্রমণে হজরত মুসআব ইবনে উমায়ের (রা.) ও নবীজির চাচা হজরত হামজা (রা.) শহীদ হন। হজরত মুসআব ইবনে ওমায়ের (রা.)-এর দেহ অবয়ব নবীজির সঙ্গে সাদৃশ্য ছিল। হজরত মুসআব ইবনে ওমায়ের (রা.) শহীদ হলে ভুলক্রমে এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে যে হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিহত হয়েছেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, এটা নিছকই গুজব। তবে নবীজি (সা.) আহত হয়েছিলেন। শুধু হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নির্দেশ অমান্য করার কারণে নিশ্চিত জয়ী হওয়া যুদ্ধে মুসলমানরা হেরে যান। এই যুদ্ধে ৭০ জন সাহাবি শাহাদত বরণ করেন। তাঁদের সবাইকে ওহুদ প্রান্তরে দাফন করা হয়।
.
ওহুদ যুদ্ধে যেসব শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সুরা আল-ইমরানের ১২১ নম্বর আয়াত থেকে শুরু করে ১৬০ নম্বর আয়াতের মধ্যে বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে মুসলমানদের রাসুল (সা.)–এর কথা অমান্য করা, মতভেদ করা এবং ছত্রভঙ্গ হওয়ার মন্দ পরিণাম সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া, যাতে তারা ভবিষ্যতে সতর্ক হয়ে যায় এবং যেসব বিষয় তাদের পরাজয়ের কারণ হতে পারে, তা থেকে বিরত থাকে।
.
মুসলিমদের বিজয় না হলেও কুরাইশরা মদিনা দখল করতে পারেনি।
Share Now
Author

Dr. Shafiqul Islam

(BBA, MBA, DU; Mphil, Japan; PhD, Australia) Deputy Secretary, Government of Bangladesh. Chief Executive Officer, Cumilla City Corporation, Local Government Division, Ministry of LGRD

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Rating*

About Dr. Shafiqul

Researcher, Writer, Thinker, Poet, Public Policy Expert, Management Specialist, Political Economy Expert, and More

error: Content is protected !!

My Shopping Cart